খবর ৭১ঃ ইলিশের প্রধান মৌসুম (জুলাই থেকে অক্টোবর) শুরু হতে আর বাকি মাত্র কয়েকদিন। অন্যান্য বছর এই সময়ে অভ্যন্তরীণ নদী এবং সাগর থেকে প্রচুর ইলিশ আসে বরিশালের মোকামে।
কিন্তু এবারই প্রথম ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ কারইে সাগরের ইলিশ আসছে না। অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর কিছু ইলিশ বরিশালের মোকামে এলেও দাম আকাশচুম্বি। যা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
তবে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে জালে। তখন দামও কমবে। ইলিশ কেনাবেচায় সারা বছরই সরগরম থাকে বরিশালের পোর্ট রোডের ইলিশের মোকাম। অন্যান্য বছর মৌসুমের এই সময়ে ট্রলার-নৌকা বোঝাই করে ইলিশ এলেও এবার ব্যতিক্রম। সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মাছ ধরতে পারছে না জেলেরা। অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও তেমন ইলিশ মিলছে না। কয়েক দিন ধরে বরিশালের মোকামে এক-দেড়শ’ মণ ইলিশ এলেও দাম সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
কাজী শাহ আলম নামে এক ক্রেতা ৯টি ইলিশ কিনেছেন সাড়ে ৭ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, এত দাম দিয়ে সাধারণের পক্ষে ইলিশ কেনা সম্ভব নয়। এরপরও ছেলের আবদার পূরণ করতেই চড়া দামে ইলিশ কিনেছেন তিনি। ইলিশ কিনতে আসা আরেক ক্রেতা আবুল কালাম বলেন, ইলিশের কেজি ৫ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে হলে মানুষ কিছুটা হলেও ইলিশের স্বাদ নিতে পারত। গতকাল মোকামে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির মধ্যেও ইলিশের বাজার জমজমাট। সর্বসাকল্যে প্রায় দেড়শ’ মণ ইলিশ এসেছে মোকামে। কিন্তু আড়তদার, পাইকার এবং খুচরা ক্রেতা বেশি। এ কারণে দামও ছিল চড়া। মোকামের ইলিশ বিক্রেতা মো. হারুন ও মো. বজলু জানান, দেড় কেজি সাইজের প্রতিমণ ইলিশ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার টাকায়। একইভাবে কেজি সাইজের প্রতিমণ ৫০ হাজার, এলসি সাইজ (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) ৪৫ হাজার, ভ্যালকা (৪০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম) প্রতিমণ ৩৪ হাজার এবং গোটলা (২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম) সাইজের প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৪ হাজার টাকায়।
আড়তদার মো. জহির সিকদার বলেন, ২ মাস আগে ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও বৃষ্টি না হওয়ায় নদ-নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না। সাগরেও ইলিশ ধরা বন্ধ। বরিশালের মোকামে ইলিশের সরবরাহ কম, তাই দামও বেশি। গত কয়েক দিন বরিশাল মোকামে গড়ে ৪০-৫০ মণ ইলিশ সরবরাহ হলেও গত দুদিন ধরে এক থেকে দেড়শ’ মণ ইলিশ আসছে।
সরবরাহ কম এবং দাম বেশি হলেও স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বরিশাল থেকে ট্রাক বোঝাই করে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
এদিকে প্রথমবারের মতো সাগরে মাছ ধরার ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন জেলে, ইলিশ শ্রমিক, পাইকার ও আড়তদাররা।
বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অধিক তাপমাত্রার কারণে গভীর পানির মাছ ইলিশ সাগর ছেড়ে নদীতে আসছে না। এ কারণে ইলিশের সরবরাহ কিছুটা কম। তবে কিছুদিন পর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
ইলিশের বৃদ্ধির জন্য পয়লা নভেম্বর থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে জাটকা শিকার বন্ধ থাকলেও গতকাল বরিশাল মোকামে প্রচুর জাটকা বেঁচাকেনা করতে দেখা গেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।