রাকিব হাসান, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে স্বামীকে তালাক দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রী’র দুই হাত মারাত্মক জখম করার ঘটনা ঘটেছে।
এমনকি ঘাতক স্বামীর হুমকিতে বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েও চিকিৎসা নিতে না পারায় প্রায় বিচ্ছিন্ন দু’হাত নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পুনঃরায় মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন স্ত্রী সুমি আক্তার (২২)।
ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার গভীর রাতে উপজেলার গাজীপুরা গ্রামে।
আহত সুমির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরা গ্রামের মো. হালিম ভান্ডারীর কন্যা সুমি আক্তার (২২) কে ৪বছর আগে পাশ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার ঝোপখালী গ্রামের বারেক সিকদারের ছেলে মন্টু সিকদারের সাথে বিয়ে দেয়া হয়।
বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী মন্টু সিকদার ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবী করেন। হত দরিদ্র সুমির মা অন্যের বাসায় কাজ করেন, ভূমিহীন বৃদ্ধ বাবা হালিম ভান্ডারী দিন আনে দিন খায়।
যৌতুকের দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় স্ত্রী সুমি আক্তারের উপর নির্যাতন চালাতো তার স্বামী মন্টু সিকদার। এক পর্যায়ে ১ বছর আগে সুমি তার ৩ বছরের ছেলে নয়নকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। এর কিছুদিন পর পেটের দায়ে সে তার মা আলেয়া বেগমকে নিয়ে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরী নেয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমি আক্তার জানান, স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ঢাকায় গিয়ে একটি গার্মেন্টসে চাকরী নেই।
মা এবং ৩ বছরের ছেলে সন্তান নিয়ে কোন রকম দিন কাটাই। এদিকে স্বামী মন্টু মোবাইল ফোনে নানা রকম হুমকী ধামকী দেয়ায় মাস খানেক আগে আমি তাকে তালাক পাঠাই।
ঈদের ছুটিতে ৯ জুন রবিবার বাড়িতে আসলে খবর পেয়ে মন্টু সোমবার গভীর রাতে ঘরে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতারি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়।
এতে সুমির বা হাতের কব্জির হাড় কেটে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে এবং ডান হাতের কনুইয়ের উপরের অধিকাংশ কেটে যায়।
সোমবার মুমুর্ষু অবস্থায় সুমিকে প্রথমে মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
বরিশালে দু’দিন চিকিৎসার পর অজ্ঞাত কারণে কোন রকম ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই সুমির নাম কেটে দেয় ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সুমিকে নিয়ে আবার মির্জাগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন অসহায় পিতা হালিম ভান্ডারি।
মির্জাগঞ্জ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুর রহমান শামীম জানান, সুমির ডান হাতের কব্জির হাড় ও বাম হাতের কনুইয়ের উপরে অধিকাংশ কেটে গেছে। সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারলে হয়তো মেয়েটি পঙ্গুত্বের হাত থেকে বাচঁতে পারবে না।
সুমির মা আলেয়া বেগম জানান, জামাই মন্টু সিকদার গাজীপুরা গ্রামের স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় থেকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে যাতে ঘটনা থানা পুলিশ পর্যন্ত না গড়ায়।
এ ব্যাপারে কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লোক মুখে শুনেছি। মেয়েটিকে নির্মমভাবে তারই স্বামী কুপিয়ে আহত করেছে।
এ বিষয়ে একটি কুচক্রিমহল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এমনকি চিকিৎসা শেষ না হতেই বরিশাল থেকে ওই রোগীর নাম কাটিয়ে নিয়ে আসছে।
মির্জাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুমুর রহমান বিশ্বাস জানান, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাইনি। তবে এ ব্যাপারে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।