বাচ্চার বদ অভ্যাস দূর করতে

0
852

বদ অভ্যেস দূর করার জন্য বকাঝকা নয়, বরং দরকার পজিটিভ অ্যাপ্রোচ। মাথা ঠান্ডা রেখে এবং ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন সন্তানকে বদ অভ্যেস থেকে দূরে রাখতে। একটি আলোচনা।

দাঁত দিয়ে নখ কাটা, আঙুল মুখে দেওয়া, পড়তে বসে পা নাচানো, ঠোঁট কামড়ানো— ছোটদের এমনতর নানা বদ অভঅযেসে বাবা মায়েরা হামেশাই জেরবার হয়ে ওঠেন। শুধু ছোটরা নয়, অনেক বড়রাও নানা ধরনের বদ অভ্যেসের শিকার। আসলে ছোট বয়সে বদ অভ্যেস দূর করতে না পরালে তা সারাজীবন থেকেই যায়। বদ অভ্যেস পরবর্তীকালে এমন ভাবে জাঁকিয়ে বসে যে তার থেকে বেরিয়ে আসা বেশ শক্ত হয়ে ওঠে। তাই ছোটবেলা থেকেই বদ অভ্যেস দূর করা দরকার। ছোটরা নতুন জিনিস যেমন সহজে আয়ত্ত করতে পারে তেমনই একটু চেষ্টা করলেই তার থেকে দূরে সরে আসতে পারে। বাচ্চার বদ অভ্যেস দূর করতে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন।

  • বাচ্চার বদ অভ্যেসের পিছনে কারণটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় বাড়ির বড়দের মধ্যে কারওর কারওর দাঁত দিয়ে নখ কাটা, পা নাচানো এই ধরনের বদ অভ্যেস থাকে। বাচ্চারা চট করে এই ধরনের আচরণর রপ্ত করে ফেলে। তাই ছোটদের বোঝানোর আগে নিজেদের অভ্যেস বদলানো জরুরি।
  • মানসিক চাপ, স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, রাগ থেকেও বাচ্চারা বিভিন্ন রকমের বদ অভ্যেসের বশবর্তী হয়ে পড়ে। এই বদ অভ্যেসগুলো একধরনের স্ট্র্যাটেজি যা বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্যে বাচ্চারা নিজে নিজেই বের করে। বিভিন্ন আবেগের সঙ্গে মোকাবিলার করার জন্যেই এই ট্যাকটিকস। দেখতে খারাপ লাগলেও, বাচ্চারা এর মধ্যে থেকে একধরনের শান্তি এবং আরাম পায়, সেইজন্যেই বারণ করা সত্ত্বেও অভ্যেসগুলো সযত্নে জিইয়ে রাখে। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটান। আদর করে ওর মনের কথা জানার চেষ্টা করুন। ওর কথা মন দিয়ে শুনুন। পরিবারের সাপোর্ট পেলে বদ অভ্যেস থেকে সরে আসা বাচ্চার পক্ষেও সহজ হবে।
  • প্রায় সব ছোট বাচ্চাদের মধ্যেই মুখে হাত দেওয়া কিংবা আঙুল চোষার অভ্যেস থাকে। এই অভ্যেস শুরু হয় একেবারে ছোট বয়সে। বাচ্চারা সাধারণত একা থাকলে, ঘুমনোর আগে কিংবা রিল্যাক্স করতে চাইলে আঙুল চোষে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অভ্যেস একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যায়। তবে অনেক বাচ্চাই চার বছর বয়সের পরও আঙুল চোষার অভ্যেস থেকেই যায়। নতুন দাঁত ওঠার পরও বাচ্চা যদি আঙুল মুখে দিতে থাকে তাহলে নখের ময়লা পেটে যাওয়া ছাড়াও এর থেকে দাঁতের অ্যালাইনমেন্ট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ছোট থেকেই বাচ্চার এই অভ্যেস দূর করার চেষ্টা করুন। তবে তিন বছর হওয়ার আগে আঙুল চোষা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তিন বছরের পর থেকে আঙুল মুখে না দেওয়ার কথা বাচ্চাকে বারবার মনে করিয়ে দিন। ওকে এমন ধরনের খেলনা দিন যাতে ওকে দুটো হাতই ব্যবহার করতে হয়। প্রয়োজনে বাচ্চার বুড়ো আঙুলে তেতো রস লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে ধীরে ধীরে আঙুল মুখে দেওয়ার অভ্যেস দূর হবে। তবে ছ’বছরের পরও এই ধরনের অভ্যেস কিন্তু স্ট্রেস বা নিরাপত্তাহীনতার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
  • বাচ্চার বদ অভ্যেস দূর করার জন্য ওকে সতর্ক করুন। কিন্তু ওকে খুব বেশি অ্যাটেনশন দেবেন না। বা ‘ছিঃ’, ‘নোংরা’ এই জাতীয় শব্দে বাচ্চাকে সম্ভোধন করবেন না বা অতিরিক্ত রিঅ্যাক্ট করবেন না। এতে বাচ্চা অনেক সময় মজা পেয়ে আরও বেশি করে ওই ধরনের কাজ করতে পারে।
  • বাচ্চা যদি আপনার কথা শোনে তবে ওর প্রশংসা করতে ভুলবেন না। বাচ্চাকে বলুন সারাদিনে একবারও মুখে হাত না দিলে রাতে ওর পছনেদের খাবার বানিয়ে দেবেন। কখনও ছোটখাটো উপহার দিন। এতে বাচ্চা বদ অভ্যেস দূর করার কাজে উৎসাহ পাবে।
  • যেকোনও ধরনের বদ অভ্যেস দূর করতে প্রয়োজনে শাসন করুন। তবে খুব বেশি বকাঝকা নয়। জোর দিন বোঝানোর উপর। গুরুগম্ভীর আলোচনায় যাবেন  না বা অহেতুক ভয় দেখাবেন না। যেমন, ‘মুখে হাত দিলে ভুতে ধরবে’— এই ধরনের কথা বলবেন না। বাচ্চা একটু বড় হলে ওকে সত্যি কথাটাই বলুন। মুখে হাত দিলে তার থেকে নানারকম অসুখ করতে পারে। সহজ ভাষায় এটাই বলুন। প্রয়োজনে বাচ্চার ডাক্তার বা স্কুলের টিচারকে দিয়েও এই কথা বলান। এতে বাচ্চার অভ্যেসে পরিবর্তন আসবে।
  • বাচ্চার বদ অভ্যেস নিয়ে ওর সঙ্গে আলাদা করে আলোচনা করুন। আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সামনে ওকে বকাঝকা করবেন না। এতে বাচ্চার আত্মসম্মান আহত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here