খবর ৭১: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট আগামীকাল ১৩ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাজেট।
বাজেট পেশ করার আগে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাজেট বক্তব্যের আকার গতানুগতিক বিশাল আকারের থাকছে না। হবে সংক্ষিপ্ত ও টু দ্য পয়েন্ট। তাই বলে বাজেটের আকার ছোট হবে না। যে কোনো অর্থবছরের তুলনায় এটি হবে রেকর্ড বাজেট। সূত্র জানিয়েছে, আগামী বাজেটে থাকছে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সমাহার।
বিশেষ করে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকীর যেসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকীর নির্দেশনা, রূপকল্প ২০২১-এর অধীনে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা, রূপকল্প ২০৪১ অর্জনের কৌশল, এসডিজি অর্জন এবং সরকারর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন দেখা যাবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের। জানা গেছে, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করবেন। আগামী বাজেটে মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
আর চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সূত্র জানিয়েছে, আগামী বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে মনে করছে সরকার। আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকবে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকার।।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতির হার আগামী অর্থবছরের জন্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সূত্র জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
বরাবরের মতো ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। তবে সমস্যা মূলত ঘাটতি অর্থায়নের উৎস নিয়ে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে নেওয়া হবে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের তুলনায় ৫ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা বেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে। অভ্যন্তরীণ অংশের আরেক খাত সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ২৭ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থাৎ চলতি বাজেটের তুলনায় আগামী বাজেটে এ খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা কম নেওয়া হবে। এর বাইরে অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া নতুন বাজেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের প্রতিফলন থাকবে। আর বেশি মনোযোগ থাকবে নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। দেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার ঘোষণা থাকছে।
এতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে গ্রামকে-যেখানে ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে। আমার গ্রাম আমার শহর এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব থাকবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের। তবে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে এ কাজে সম্পৃক্ত করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় ও ২০১৯ সালের বাজেট অধিবেশন গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় শুরু হয়েছে। আর আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।