লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ

0
460

খবর ৭১: ইস! আর কিছু রান স্কোর বোর্ডে থাকলে হয়তো বাংলাদেশ লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে জিতেই যেতো! এমন অনেক হবে, হয়তো কাল বাতাসে মিলিয়ে গেছে। কিছু ভুল, টপ অর্ডারদের বড় জুটি না হওয়া, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ডট বল, ফিল্ডিংয়ে কিছু রান আউটের সুযোগে ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় ও টস কোনো কিছুই বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না।

তারপরও ২৪৪ রান নিয়ে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। কার্ডিফে ৮ জুন বাংলাদেশের তৃতীয় বিশ্বকাপ ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুরন্ত সূচনার পর এমন হারে বাংলাদেশ মানসিকভাবে নয়, তবে পয়েন্ট অর্জন থেকে বঞ্চিত হলো ২ উইকেটের হারে (২৪৮/৮,৪৭.১ ওভার)।

২৪৫ রানের টার্গেট নিউজিল্যান্ডের কাছে এক প্রকার ‘শিশুতোষ’ ব্যাপারই। মাশরাফি ও মিরাজ দুদিক থেকে বল শুরু করেন। গাপটিল ও মানরো চড়াও হওয়ার চেষ্টাতে ছিলেন। অবশ্য মিরাজ ও মাশরাফি প্রথম দফায় উইকেট নিতে ব্যর্থ হওয়ায় বল করতে আসেন সাকিব আল হাসান। গাপটিল একাই একটি ম্যাচের প্রাণবায়ু বের করে দিতে পারেন। ১৪ বলে ২৫ রানে করে দৈত্য হওয়ার আগে সাকিবের বলে তামিমের কাছে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

ইনিংসে দশম ওভারের শেষ বলে আবারও সাকিব জ্বলে ওঠেন। আরেক ওপেনার মানরোকে (২৪) ফেরান তিনি। ১০ ওভারে ৫৫ রানে ২টি উইকেট নেই নিউজিল্যান্ডের। এই উৎসব দীর্ঘয়িত হতে পারত। যদি মুশফিক সেই ভুলটি না করতেন। ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রান নিতে গিয়ে উইলিয়ামসন বিপাকে পড়েন। টেলর ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলেন। টেলর কল দাওয়ার অনেক পরে উইলিয়ামসন দৌঁড় শুরু করেন। মুশফিক বল পেয়ে যান থ্রো থেকে। বলটি স্ট্যাম্পে লাগিয়ে ভেঙেও ফেলেন। রান আউটের উৎসব ভেস্তে যায় রিপ্লে দেখে। মুশফিক আগেই পা দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়েছেন! মুশফিকের দাঁড়ানোর পজিশন নিয়ে হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু করার ছিল না। এই উইলিয়ামসন ও রস টেলর বাংলাদেশের হন্তারক হয়ে ওঠেন তৃতীয় উইকেটে।

তৃতীয় উইকেটে টেলর-উইলিয়ামসন ১০৫ রান তুলে নেয়। উইলিয়ামসন ৪০ রানে ফেরেন মিরাজের শিকার হয়ে। লাথামকেও (০) খালি হাতে ফেরান মিরাজ। টেলর যখন ৮২ রানে আউট হন তখন নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেটে ১৯১ রান (৩৮.৩ ওভার)। নিশাম ও গ্রান্ডহোমে জয়ের পথে হাঁটা শুরু করেন। লাথাম আউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ড চাপে ছিল কিছুটা। তবে সে চাপ থেকে তারা বের হয়ে যায়। মুশফিক পরে গ্রান্ডহোমের (১৫) ক্যাচটি নিয়ে প্রায়শ্চিত করেছিলেন। কিন্তু তখন নিউজিল্যান্ডের রান ৬ উইকেটে ২১৮ (৪৩.১ ওভার)।

লন্ডনে সকাল হয়েছিল সূর্যের উজ্জল হাসি নিয়ে। দুপুর গড়াতে গড়াতেই মুখ ভাড় করে ফেলে আকাশ। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন কেনিংটন ওভালের ঘাসে ছাওয়া সেন্ট্রাল উইকেট দেখে ভাব ও গতি বুঝে ফেলেছেন জহুরির চোখে। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কারণ ম্যাট হেনরি, কালাম ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্টের ভয়বহ গতি ও লেংথে বোলিং করার ক্ষমতা। এমন উইকেটে পৃথিবীর যেকোনো ব্যাটিংয়ের সামনে ত্রাস তারা। বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড পরীক্ষার সিলেবাসে ছিলই নিশাম ও গ্রান্ডহোমে। ৫ পেসার নিয়ে বাংলাদেশের লড়াইটা কঠিন করে ফেলে তারা।

বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবে একাদশের কোনো পরিবর্তন করেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা জয়ী কম্বিনেশনটি ধরে রাখে ম্যানেজম্যান্ট। দারুণ জয়ে শুরু করা বিশ্বকাপে জয়ের ধারাতে থাকাটাই বড় কথা ছিল। নিউজিল্যান্ড নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকাকে উড়িয়ে দিয়ে এসেছে। ১০ উইকেটের জয় ছিল সেটা। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের এগিয়ে যাওয়ার ম্যাচ ছিল এটা। বাংলাদেশের জয় ছিল ২১ রানে। জয় নিয়ে ঈদ করতে যাওয়া বাংলাদেশকে কিছুটা মনোযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয়েছে।

মুখ গোমড়া করা আকাশের নিচে ম্যাচ ওপেন করতে নামেন তামিম ও সৌম্য। এমন কন্ডিশনে মাথা ঠান্ডা করে খেলার চিন্তা করেছিলেন দু ওপেনার। ম্যাট হেনরি ও ফার্গুসনের গতির তোপে টেকা মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। একে তো প্রতিকূল আবহাওয়া, তারওপর গতির ঝড়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না কিছুই। সৌম্য সরকার হেনরির গতিময় বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেছেন ২৫ রান। তামিম (২৪ রান ৩৮ বলে) রিস্ক ফ্রি খেলতে গিয়েছিলেন। হয়নি এবারও! উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে সার্কেলের ভেতরে। ওপেনিং জুটি ছিল ৪৫ রানের। ৬০ রান যেতেই ২টি উইকেট নেই বাংলাদেশের।

মুশফিক ও সাকিব হাল ধরেন বাংলাদেশের ইনিংসের। ছন্দে উঠে গিয়েছিল এই জুটি। তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সুখের জুটি ৫০ রানে থামে। একটি দূর্ঘটনায় পতিত হন মুশফিক। সার্কেলের ভেতরে গাপটিলের দিকে বল রেখে ‘ডাবল মাইন্ড’ হয়ে যান মুশফিক। কলটা মনে হয়েছে সাকিবের ছিল। মুশফিক (১৯) উইকেটের মাঝে চলে গিয়েছিলেন আর কূল রক্ষা করতে পারেননি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাকিব-মুশফিক জুটি গুরুত্বপুর্ণ ছিল। গাপটিল থ্রো করেন, উইকেটরক্ষক লাথাম স্ট্যাম্প ভেঙে গেলেন। পরবর্তীতে অনূভূত হয়, এই জুটিটা ভেঙে যাওয়ায় বাংলাদেশ বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হয়। সাকিব ও মিথুন (২৬) আশা জাগিয়েছিলেন। তবে চতুর্থ উইকেটে সেটা ৪১ রানের জুটি। এরপর আর বড় কোনো জুটি হয়নি। সাকিব আল হাসান গ্রান্ডহোমের বলে শিকার হন ৬৪ রানে। ক্যারিয়ারের ৪৪তম হাফ সেঞ্চুরি (বিশ্বকাপে টানা ২) ছিল এটি।

সাকিব যখন আউট হলেন তখন বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ১৫১ রান (৩০.২ ওভার)। মাহমুদউল্লাহর দিনটি খারাপ ছিল। ৪১ বলে করেছেন তিনি ২০ রান। সাইফউদ্দিনের ইনিংসটিতে বাংলাদেশ কিছুটা প্রাণ পায়। ২৩ বলে ২৯ রান করেন তিনি। ৪৯.২ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট ২৪৪ রানে। নিউজিল্যান্ডের সমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইন আপের কাছে এটি ছিল ‘খেলো’। হেসে-খেলে এই রান তুলে ফেলারই কথা! বাংলাদেশ বলেই বিশ্বাস ছিল! সহজে তো ছাড়া দেবে না!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here