খবর ৭১ঃ : দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এবার ঈদ ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে থাকছে বাড়তি নজরদারি। বিশেষ করে উগ্রপন্থিদের তৎপরতার ব্যাপারে তীক্ষষ্ট দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর মালিবাগ ও গুলিস্তানে পরপর দু’দফায় পুলিশকে টার্গেট করে বোমা রেখে যাওয়ার ঘটনায় আবারও জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি সংশ্নিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। এমন বাস্তবতায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ছক তৈরি করেছে। গত শনি ও রোববার ঢাকাসহ সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করে। একটি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সুনির্দিষ্ট হামলার হুমকি না থাকলেও কোনো শঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে, বাতিল করা হয়েছে ডিএমপির অধিকাংশ পুলিশ সদস্যের ছুটি। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতি। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নির্বিঘ্নে ঈদ জামাত সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্নিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, উগ্রপন্থিদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় সতর্ক রয়েছে। এবার ঈদেও থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে ব্লকরেইড চলছে। বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে পুলিশ কাজ করছে। সুনির্দিষ্ট কোনো হামলার তথ্য নেই। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে সতর্ক থাকতে হবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, নগরীতে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় উদ্যোগের ব্যাপারে সব সংশ্নিষ্ট ইউনিটকে এরই মধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। অধিকাংশ পুলিশ সদস্যের ছুটিও বাতিল করা হয়।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, শোলাকিয়ার ঈদ জামাত নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঈদগাহর ভেতরে ও চারপাশে সিসিটিভি বসানো হচ্ছে। আকাশে থাকবে ড্রোন। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও আনসারের সদস্যরা সেখানে থাকবেন।
শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, যে কোনো ধরনের নাশকতা ও অপরাধ মোকাবেলায় জেলা পুলিশ সতর্ক রয়েছে। পুলিশ যে কারও অপতৎপরতা রুখতে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সক্ষম।
সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পরপরই রাজধানীতে দুই দফায় পুলিশের গাড়ি টার্গেট করে বোমা বিস্ম্ফোরণের ঘটনাটি তারা গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন। বিশেষ করে গত ২৬ মে রাতে রাজধানীর মালিবাগ পুলিশের বিশেষ শাখার একটি পিকআপভ্যানে বিস্ম্ফোরিত বোমাটি ছিল শক্তিশালী। এতে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদা আক্তারসহ তিনজন আহত হন। বিস্ম্ফোরণের পাঁচ ঘণ্টা পর এর দায় স্বীকার করে কথিত আইএস। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে একটি ট্রাফিক বক্সের পাশে হাতে তৈরি বোমা বিস্ম্ফোরিত হয়। এতে ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্য ও একজন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য আহত হন।
সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিসানে হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে উগ্রপন্থিরা। তবে জঙ্গি নতুন একটি গ্রুপ সম্প্রতি আবার সক্রিয় হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তারা অনলাইনে সংগঠনে সদস্য যুক্ত করছে। নব্য জেএমবির তামিম-সারওয়ার গ্রুপ কোণঠাসা হলেও আনসার আল ইসলাম এখনও সক্রিয় রয়েছে। গোপনে তারা শক্তি সঞ্চয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি ফান্ড পেতে হামলা চালিয়ে নিজেদের অবস্থা জানান দিতে মরিয়া তারা।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ঈদ ঘিরে রাজধানীতে থাকছে বাড়তি চেকপোস্ট ও প্যাট্রল। ঢাকার প্রবেশপথে থাকছে বাড়তি নজরদারি। এ ছাড়া বাস, রেল, লঞ্চস্টেশনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় থাকছে অতিরিক্ত সতর্কতা। ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে প্রবেশধারী সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হবে। এরই মধ্যে হোটেল, মেসে সন্দেহভাজন কেউ থাকলে সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন কিছু দেখলে ‘৯৯৯’ কল করে জানাতে অনুরোধ করা হয়।
দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী ও বারিধারায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঘিরে থাকছে বাড়তি নজর। ফাঁকা রাজধানীতে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে সর্বাত্মক নজর থাকবে পুলিশ-র্যাবের। কোনো এলাকায় বোমাসদৃশ বস্তু দেখলে তা পরীক্ষা করার জন্য সতর্ক থাকছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ফ্ক্রিয়করণ দল। কোনো তথ্য পেলেই তারা সেখানে ছুটে যাবেন।