খবর৭১ঃসব পোশাক কারখানা ছুটি হয়েছে একসঙ্গে। এতে পোশাক শ্রমিকদের চাপ পড়েছে সড়কে। গাজীপুরে যাত্রীর তুলনায় পরিবহন কম থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের নাওজোর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম।
দিনে মাঝে মাঝে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিতে ভিজে বাসের ছাদে করে গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অনেক নারীদেরকেও বাসের ছাদে, ট্রাকে, পিকআপ ভ্যানে যেতে দেখা গেছে।
ভোর থেকে যানবাহনগুলো স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে বিকালের দিকে থেমে থেমে চলতে দেখা গেছে যানবাহনগুলো।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গাজীপুর-মাওনা রুটে বাস সংকট থাকায় দিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। একই দৃশ্য চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর শহরে যাওয়ার পথেও।
মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত রিকশা ভাড়াও তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়ে বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়া মিটিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এস কিউ সেলসিয়াস লি. নামে একটি সোয়েটার কারখানার লিংকিং অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম জানান, মাওনা চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ ৬০ টাকা ভাড়া। সেখানে ১২০ টাকা নিচ্ছে। যা অন্যান্য দিনের চেয়ে দ্বিগুণ।
একই কথা জানালেন মাস্টারবাড়ি এলাকার পেনডোরা সোয়েটার কারখানার সুয়িং অপরেটর শাহনাজ বেগমও।
তাছলিমা আক্তার নামের এক পোশাক শ্রমিক জানায়, সোমবার কারখানা ছুটি হয়েছে। সব পাওনাও বুঝিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাই আজ বাড়ি ফিরছি। তবে খুব কষ্ট হচ্ছে। কারণ, এক এলাকা দিয়ে রৌদ্র, আবার অন্য এলাকা দিয়ে বৃষ্টি। তাছাড়া, বাসে উঠলেই ঈদ বকশিশের নামে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলগামী যাত্রীদের কাছ থেকেও দিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে চেম্পিয়ন শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত চলাচল করলেও ঈদ উপলক্ষে এ পরিবহনগুলোকে ভালুকা, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ পর্যন্ত চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।
অনেক পোশাক কারখানার একই এলাকার শ্রমিকেরা মিলে বাস রিজার্ভ করে বাড়ি ফিরছে।
এদিকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার সড়ক, মহাসড়কে যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ভোগড়া বাইপাস এলাকার স্কয়ার ফ্যাশনে চাকরি করেন নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার খিত্তিপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম এবং পূর্বধলা উপজেলার আব্দুল মতিন।
দুপুর ১টার দিকে তারা আসেন জয়দেবপুর রেল জংশনে। দুপুর ১২টার দিকে তাদের কারখানায় ঈদের ছুটি দিয়েছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবারই তিনি গ্রামে বাড়িতে ঈদ উদযাপন করেন। বাড়িতে তার মা-বাবা ও বোন থাকেন। যানজটের আশঙ্কায় এক সপ্তাহ আগে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
তিনি জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জয়দেবপুর জংশনে যাত্রীর চাপ কম দেখছেন। পোশাক শ্রমিকেরা কর্মস্থলে ছুটির পর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাস ও রেল স্টেশনের দিকে ছুটে চলেছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর শিল্পনগর কোনাবাড়ি, টঙ্গী, ভোগড়া, জিরানী, কাশিমপুর, চক্রবর্তী, চান্দনা চৌরাস্ত, বোর্ড বাজার, রাজেন্দ্রপুর, মাওনা, কালিয়াকৈর, মৌচাকসহ শিল্পাঞ্চলগুলো ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে দলে দলে লোকজন ছুটে যাচ্ছেন বাস ও রেল স্টেশনের দিকে।
এদিকে, বাস কিংবা রেল স্টেশনে যেতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজির বিরুদ্ধে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে যারা বাড়ি ফিরেছেন তারা এবার ঈদে অতি স্বচ্ছন্দে যাত্রা করেছেন। এ মহাসড়কটি ফোর লেন হওয়ায় কোনো যানজট চোখে পড়েনি।
এবার ঈদে মহাসড়কের যানজট নিরসনে গাজীপুরের পুলিশের পক্ষ থেকে কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গাজীপুর জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশও রয়েছে।
সালনা হাইওয়ে থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোনো স্থানে কোনো সমস্যা নেই। দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহন ধীরগতিতে চললেও ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা আনন্দে বাড়ি ফিরছে। মহাসড়কে যানজট একেবারেই নেই।