খবর৭১:বাহির থেকে দেখলে মনে হয় এ যেনো ধনাঢ্য কোনো ব্যক্তির বিলাসবহুল বাড়ি। সংকোচ কাটাতে কাছে গেলে পরিষ্কার হয় এটি আসলে চার তারকা হোটেল। এরপর ভেতরে ঢুকলে মনে হয় এ যেনো এক রাজপ্রাসাদ। আসলে এটি একটি অত্যাধুনিক লঞ্চ। এবারের ঈদেই এর যাত্রা শুরু হতে পারে।
বরিশাল-ঢাকা নদীপথে যাত্রীদের যাত্রা আরও আরামদায়ক করতে বিলাসবহুল এই লঞ্চটি নির্মাণ করেছে দেশের অন্যতম নৌযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ডলার ট্রেডিং কর্পোরেশন। লঞ্চটির নাম রাখা হয়েছে এমভি কুয়াকাটা-২। সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদের আগেই যাত্রী পরিবহন করবে কুয়াকাটা-২। উদ্বোধনের আগে লঞ্চটি পরীক্ষা করে নেওয়া হচ্ছে।
লঞ্চটির ভেতরে কাঠের কারুকাজ, নান্দনিক ডিজাইন ও আধুনিক সাজসজ্জা দেখলে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। এটি যেনো নদীতে ভাসমান বিলাসবহুল এক চার তারকা হোটেল। প্রযুক্তিনির্ভর এই লঞ্চটিতে থাকছে চার তারকা হোটেলের যাবতীয় ব্যবস্থা। অসাধারণ নির্মাণ শৈলীর সুনিপুণ প্রদর্শনীর কারণে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় এটি লঞ্চ নাকি চার তারকা হোটেল।
যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে লঞ্চটিতে রয়েছে- বিনোদন স্পেস, বড় পর্দার টিভি, দেশ-বিদেশের চ্যানেল দেখতে ডিশ কানেকশন, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগের ব্যবস্থা, রেস্টুরেন্ট, উন্মুক্ত ওয়াইফাই সুবিধাসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা। লঞ্চটির আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া আধুনিক ঝাড়বাতিসহ বিভিন্ন ধরনের এলইডি লাইট। দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে নির্মিত এই লঞ্চ যে কারো শ্বাস আটকে দিতে সক্ষম।
এমভি কুয়াকাটা-২ নিয়ে ডলার ট্রেডিং কর্পোরেশনের লঞ্চের সংখ্যা দাঁড়ালো চারটিতে। কুয়াকাটা-১ নামে এ কোম্পানির আরেকটি লঞ্চ পটুয়াখালী-ঢাকা নদীপথে চলাচল করছে। রেডসান-২ লঞ্চটি ঢাকা-শরীয়তপুর এবং রেডসান-৫ লঞ্চটি ঢাকা-তুষখালী রুটে চলাচল করছে। তবে এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চটি ডলার ট্রেডিং কর্পোরেশনের সবচেয়ে আধুনিক লঞ্চ। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ধলেশ্বর এলাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চটি তৈরি করা হয়েছে।
এই লঞ্চের নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মো. পলাশ বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ নৌ-স্থপতির নকশায় সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের নির্মাণ কাজ চলেছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন দক্ষ শ্রমিকের পরিশ্রমে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।’
২৭০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের লঞ্চটির প্রস্থ ৪৪ ফুট। এই লঞ্চটি দেড় হাজারের বেশি যাত্রী ধারণ করতে পারবে। চারতলা বিশিষ্ট লঞ্চটিতে পাঁচ শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সুবিধা রয়েছে।
কুয়াকাটা-২ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. পলাশ বলেন, ‘লঞ্চে দেড় শতাধিক কেবিন রয়েছে। এতে মোট তিন ধরনের কেবিন আছে। বিলাসী যাত্রীদের জন্য থাকছে চারটি ভিআইপি ও তিনটি সেমি-ভিআইপি কেবিন। রয়েছে তিনটি ফ্যামিলি কেবিন। এছাড়া লঞ্চটিতে রয়েছে ৫৮টি ডাবল ও ৮৬টি সিঙ্গেল কেবিন। লঞ্চের প্রতিটি কেবিন দৃষ্টিনন্দন ব্যয়বহুল আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে, যা যাত্রীদের লঞ্চ যাত্রায় বাড়তি আনন্দ দেবে।’
ডলার ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক আবুল কালাম খান বলেন, ‘কুয়াকাটা-২ লঞ্চটি তৈরির সময় যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জাহাজ নির্মাণের অন্যতম কাঁচামাল ইস্পাতের তৈরি নতুন পাত বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘লঞ্চটির চালিকা শক্তি যোগাবে জাপানের তৈরি ১ হাজার ৯২০ অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনের ফলে লঞ্চটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিলের মজবুত তলদেশ থাকায় দুর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে লঞ্চ ডুবির আশঙ্কাও নেই।’
আবুল কালাম খান বলেন, ‘লঞ্চে নামাজ আদায়ের স্থান ছাড়াও একতলা ও তিনতলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তিনতলার রেস্টুরেন্টটি আধুনিক আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। ভ্রমণে ক্লান্তি দূর করতে বিলাসী যাত্রীদের জন্য ভিআইপি কেবিনগুলোকে বিলাসবহুল আবাসিক চার তারকা হোটেলের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রের পাশাপাশি এর সৌন্দর্য বাড়াতে লঞ্চের করিডোরসহ বিভিন্ন স্থানে দামি ওয়াল পেইন্টিং ঝুলানো হয়েছে। ভিআইপি প্রতিটি কেবিনের সঙ্গে রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। এখানে বসে নদী, পানি, আকাশ আর আশপাশের মনোরম প্রকৃতি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে লঞ্চটি পানিতে ভাসানো হয়েছে। ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় নদীতে চালিয়ে ইঞ্জিন পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনো ত্রুটি ছাড়াই সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে লঞ্চটি। সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদের আগেই অর্থাৎ ২৬ রোজায় এটি উদ্বোধন করা হবে। এই লঞ্চ যাত্রীদের চমকে দিবে এটা আমাদের বিশ্বাস।’
লঞ্চের ভাড়ার ব্যাপারে আবুল কামাল বলেন, ‘বিলাসবহুল হলেও লঞ্চের ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন হবে না। সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যসব নৌযানের মতোই থাকবে