খবর৭১ঃ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারতকে দেয়া বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা—জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস (জিএসপি) বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ভারতের জিএসপি সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দেন৷
বুধবার থেকে এই ঘোষণা কার্যকর হবে৷ জিএসপি বাতিলের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ভারতের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ‘গ্রহণযোগ্য‘ প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি দেশটি৷ যে কারণে, ভারতকে দেয়া বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়া হল বলে জানান তিনি৷
ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক‘ উল্লেখ করে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ওয়াশিংটনের সাথে একটি দৃঢ় বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাবে৷ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর এক বিবৃতিতে নতুন দিল্লি জানায়, ‘‘আমরা নিশ্চিত যে, উভয় দেশের স্বার্থ বজায় রেখে একটি দৃঢ় সম্পর্ক ধরে রাখতে দু’দেশ নিবিড়ভাবে কাজ করে যাবে৷’’
কী সুবিধা পেত ভারত?
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাণিজ্য সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে জিএসপি প্রকল্প চালু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ এ প্রকল্পের আওতায়, উন্নয়নশীল দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্য রপ্তানি করতে পারে৷ জিএসপির সুবিধার আওতায় ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিভিন্ন পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারতো৷ ভারতীয় এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জিএসপি সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি বাবদ দেশটি প্রতিবছর প্রায় দুই’শ ৫০ মিলিয়ন ডলার মুনাফা করত৷
ভারতের ‘রক্ষণশীল বাণিজ্য নীতি’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে স্থানীয় ব্যবসা ও শিল্পকে প্রণোদনা প্রদানের অংশ হিসেবে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় ভারত সরকার৷ এ সময় দেশটিতে ই-কমার্স খাতের বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদা নিয়ম চালু করে ভারত সরকার৷ ফলে ব্যবসায়িক চাপের মুখে পড়ে আমাজন ও ফ্লিপকার্টের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো৷
গত বছর, ভারত সরকার ভিসাকার্ড এবং মাস্টারকার্ড প্রদানকারি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভারতীয় কার্ড ব্যহারকারিদের তথ্য শুধুমাত্র ভারতের অনলাইন সার্ভারে জমা রাখার আদেশ দেয়৷ আদেশের পর এ খাতের সংশ্লিষ্ট অ্যামেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানায়৷
এর আগে, বিদেশি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও স্মার্টফোন আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক বাড়িয়ে দেয় ভারত সরকার৷ ভারত সরকারের এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, ভারত সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যখাতে প্রভাব ফেলছে৷
তার আগে ভারত থেকে আমদানিকৃত স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর যথাক্রমে শতকরা ২৫ ভাগ এবং ১০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ চলমান এ অস্থিরতায়, গত মার্চ মাস থেকেই ভারতের জিএসপি সুবিধা বাতিলের পরিকল্পনা করছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
গত ৪ মার্চ কংগ্রেসকে দেয়া এক চিঠিতে হোয়াট হাউস জানায়, ভারত ও তুরস্কের জিএসপি সুবিধা বাতিলের পরিকল্পনা করছে তারা৷ ধারণা করা হচ্ছে, জিএসপি সুবিধা বাতিলের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ভারতের জাতীয় নির্বাচন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন ট্রাম্প৷ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর পরই জিএসপি সুবিধা বাতিলের এ ঘোষণা দেয়া হলো৷