মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
সৈয়দপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন পেয়েও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধানের দাম না থাকায় কৃষকের হাতে বাড়তি নগদ অর্থ নেই। হাতে টাকা না থাকায় কৃষক পরিবারের সদস্যরা ঈদের কেনাকাটা করতে পারছে না। সে কারণে ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে। ফলে ধানের দর পতনের প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারে। আসন্ন ঈদের ২৩ রোজা পেরিয়ে গেলেও কৃষক পরিবারগুলোর ঈদ কেনাকাটায় ভাটা পড়েছে। গত পাঁচদিন আগে সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হলেও ধানের খোলা বাজারে দামের কোন প্রভাব পড়েনি। হাটে আগের মত প্রতি মণ মোটা চালের ধান ৪০০ টাকা এবং সরু ধান ৫২০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি ঈদুল ফিতরের। ঈদকে ঘিরে শহরে ধুমছে কেনাকাটা চললেও কৃষক পরিবারগুলোতে ঈদের আনন্দ পরিণত হয়েছে হতাশায়।
কামারপুকুর ইউপির ধলাগাছ গ্রামের কৃষক সাদেক জানান, ঈদ আসার আগেই ধানের বাম্পার ফলন দেখে মহাখুশি হয়েছে পরিবারের সদস্যরা। আশা ছিল এবার ধান বিক্রি করে ভালো অর্থ মিলবে। ঈদ পালনও ভালোভাবেই হবে। কিন্তু ধানের দাম না থাকায় তার আশা গুড়েবালি হয়েছে। অথচ আর কয়েকদিন পর ঈদ। কিন্তু ধান ওঠার আগেই ধানের দরপতন হওয়ায় ঈদের কেনাকাটা নিয়ে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি।
এবারের ঈদে সৈয়দপুরে প্রায় ৩০ হাজার কৃষক পরিবারের এক লাখ নারী পুরুষ শিশু অনেকটাই ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকবে। বাজারে ধানের মূল্য পড়ে যাওয়ায় ঈদের বাজারে কৃষক পরিবারের সদস্যদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। ঈদ বাজারে যারা কেনাকাটা করছেন তাদের ৯০ শতাংশ মানুষই সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ী পরিবার। শহরের নিউ ক্লথ মার্কেট, সৈয়দপুর প্লাজা, সুপার মার্কেট ও শহীদ ডা. সামসুল হক সড়কে তৈরী পোশাকের দোকানগুলো ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র মিলেছে। কৃষি দপ্তর সূত্রে মতে, এ বছর সৈয়দপুরে প্রায় ৩০ হাজার কৃষক পরিবার প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করে। কৃষি দপ্তরের পরামর্শ আর কৃষক সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে ধান। কিন্তু স্থানীয়ভাবে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান কেনা হচ্ছে মাত্র ২৩৬ মেট্রিক টন। এই পরিমাণ ধান বিক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছে মাত্র ৪৯১ জন কৃষক। আর সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রির সুবিধাবঞ্চিত হয়েছেন ২৯ হাজার ৫০৯ জন কৃষক। যাদের আয়ের প্রধান উৎস হলো বোরো ধান। ধানকে ঘিরেই তাদের সারা বছরের বাজেট নির্ধারণ হয়। চাষাবাদ, ছেলে মেয়েদের পড়ালেখায় খরচ, ওষুধপত্র, আত্মীয় স্বজন ও সামাজিকতার ব্যয় নির্বাহ করা হয় ধান উৎপাদনকে ঘিরে। প্রধান ফসলের মূল্য না মেলায় সবকিছ্ ুউলট-পালট অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কৃষক পরিবারগুলোতে। ফলে ঈদ বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মন্দাভাব চলছে।
ঈদ বাজার নিয়ে কথা হয় নিউ ক্লথ মার্কেটের থ্যাংকস ক্লথ স্টোরের মালিক মো. একরামুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, আশি ভাগ ক্রেতা গ্রামে বাস করে। তারা আর্থিক সংকটে বাজারে আসতে না পারায় বেচাকেনা রমজানের শেষ ভাগেও জমে ওঠেনি। শহীদ ডা. সামসুল হক সড়কের তৈরী পোশাক বিক্রেতা ঢাকা ফ্যাসনের মালিক নাজমুল হোসাইন মিলন জানান, ঈদকে ঘিরে যত টাকায় গার্মেন্টস পোশাক কেনা হয়েছে তার অর্ধেকও বিক্রি হবে কিনা সন্দেহ।
সুপার সপিংমল সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটের তৈরী পোশাক ব্যবসায়ী ওয়ালিউর রহমান রতন জানান, ধানের ভালো ফলনের খবরে আমরা ব্যবসায়ীরা ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম। মনে করেছিলাম এবারে ধান কাটা মাড়াই মওসুমে ঈদ-উল-ফিতর হবে। কেনাবেচায় হবে বাজিমাত। কিন্তু ধানের দাম না থাকায় আশার আলোয় কালো মেঘ জমে হতাশা ভর করেছে।
শহরের সুপার মার্কেটের আমেদ ক্লথ স্টোরের ব্যবসায়ী আবিদ হোসেন ডলার বলেন, বিগত ঈদে ১৫ রমজান থেকে কেনাকাটা তুঙ্গে উঠত, এবার সেই ভাব দেখছি। কেনাকাটা করছেন কেবল শহরের চাকুরিজীবীরা। ধানের দাম না থাকায় গ্রামের মানুষের ভীড় তেমন নেই। ধারণা ছিল এবার ধানের মওসুমে বেচাবিক্রি বেশী হবে, কিন্তু বেচাবিক্রিতে সেই আশা দেখছি না। ধানের দাম নেই বলে কৃষক পরিবারগুলো মার্কেটমুখো হচ্ছেন না। এতে ঈদ বাজারের ব্যবসায় মন্দা চলছে।
আসন্ন ঈদ ও ধানের বাজার নিয়ে কথা হয় কৃষক নেতা রুহুল আলম, তোফাজ্জল হোসেন ও আকবর আলীর সঙ্গে। তারা জানান দেশে কৃষক বাঁচানোর কৃষি নীতি না থাকায় কৃষক পরিবারগুলোর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ধান কাটা মাড়াইয়ের মওসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হলে ধানের বাজারে এমন ধ্বস নামতো না। সে জন্য কৃষক বাঁচাতে এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কৃষকবান্ধব কৃষিনীতি প্রণয়নসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
পুলিশী টহল বৃদ্ধির দাবি
সৈয়দপুরে অজ্ঞান ও মহিলা টানা পার্টির
দৌরাত্মে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
ঈদের বাজারে মহিলা টানা পার্টির তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে সৈয়দপুরে। বসে নেই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরাও। গত তিন দিনে একাধিক ঘটনা ঘটেছে। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢাকা ব্রাদার্স ইউনিয়নের ফুটবলার মহিউদ্দিন রানু (২২) ও বাগেরহাটের ব্যবসায়ী সোহেল (৩৫) সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। খেলোয়ার রানুর বাড়ি শহরের বাঁশবাড়ী এলাকায় ও ব্যবসায়ী সোহেলের পৈত্রিক নিবাস বাগেরহাট জেলার বানিয়াডাঙ্গায়। এসব অপরাধের ঘটনা ঘটছে দূরপাল্লার বাস আর ট্রেনে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মে রাতে ঢাকার কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ঠাকুরগাঁওগামী নৈশকোচ শ্যামলি পরিবহন বাসে ফুটবলার মহিউদ্দিন রানু সৈয়দপুরে আসার জন্য উঠে। এরপর সাভারে পৌছেই সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরদিন ২৮ মে সকাল বেলা শহরের অদূরে রাবেয়া নামক স্থানে বাসের লোকজন অচেতন অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে যায়। পরে ওই এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। রানুর পারিবারিক সূত্র জানায়, সিটের পাশে বসা যাত্রীবেশি অজ্ঞান পার্টির সদস্য সুগন্ধি ছড়িয়ে রানুকে অচেতন করে পকেটে থাকা আট হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। তবে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ওই খপ্পর থেকে বেঁচে যায়।
এদিকে গত ২৭ মে রাতে বাগেরহাটের ব্যবসায়ী সোহেল খুলনা থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী আন্তঃনগর সীমান্ত ট্রেনে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে সান্তাহারে আসার উদ্দেশ্যে ওঠে। একইভাবে পাশের সিটে বসা যাত্রীবেশি অজ্ঞান পার্টির সদস্য জুসের মধ্যে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়ায়। এরপর ওই ব্যবসায়ী অজ্ঞান হয়ে সিটে পড়ে থাকলে পরদিন ২৮ মে সকালে সৈয়দপুর জিআরপি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সঙ্গাহীন অবস্থায় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া চিকিৎসা বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।
এদিকে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতার সঙ্গে সৈয়দপুর শহরে ঈদের বাজারে মহিলা টানা পার্টির দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতাবেশি টানা পার্টির মহিলা সদস্যরা কাপড়ের দোকানে সুকৌশলে ভীড় করছে। দোকানীর সঙ্গে দাম দর ও কাপড় দেখার ফাঁকে বাহাতের কাজ সারছে। শহরের শহীদ ডা. সামসুল হক সড়ক, নিউ ক্লথ মার্কেট, বস্ত্র মার্কেট, সৈয়দপুর প্লাজায় অহরহ চুরি ও পকেট কাটার ঘটনা ঘটছে। টানা পার্টির মহিলা সদস্যরা চুরির কাজে ছোট শিশুদের ব্যবহার করছে। ফলে মাঝে মধ্যে ধরা পড়লেও মানবিকতার দোহাই দিয়ে তারা ছাড়া পাচ্ছে। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীরা আতংকে দিন পার করছেন। সেজন্য ব্যবসায়ীসহ ক্রেতারা ঈদের দিনের আগ পর্যন্ত বাস, ট্রেন ও বাজারে পুলিশি টহল জোরদার করার দাবি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজাহান পাশার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কোন অভিযোগ পায়নি পুলিশ। তবে ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপত্তার মার্কেটগুলোতে পুলিশী টহল অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনে টহল দলে পুলিশের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে নজরদারি বাড়ানো হবে।