খবর৭১ঃ ধানের কম মূল্যের কারণে কৃষকের বিপাকে পড়ার বিষয়টি নিয়ে যখন তুমুল আলোচনা, তখন কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ ভর্তুকি রয়েছে সে টাকাটাও খরছ হচ্ছে না।
ফসলের ন্যায্যমূল্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে কৃষি অর্থনীতিবিদরা সরকারি ক্রয় বাড়ানো, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি খরচ কমাতে কৃষককে নানা প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু যখন ভর্তুকি তথা প্রণোদনা বাড়ানোর কথা হচ্ছে, তখন ভর্তুকির বরাদ্দ ফেরত আসার বিষয়টি জানা যাচ্ছে।
চলতি অর্থ বছরে বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকির জন্য নয় হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখছে সরকার। আগের বছরেও বরাদ্দ ছিল সম পরিমাণ। তবে পুরো টাকা খরচও করতে পারে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের তথ্য, তিন হাজার কোটি টাকার মতো ভর্তুকি অব্যবহৃত থাকছে।
২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেটে কৃষি খাতে সরকারের বিনিয়োগ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থের সঠিক ব্যবহার হলে কৃষকের খরচ কমত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, ‘দেখা যায় বাজেট আছে কিন্তু সে টাকা খরচ হয় না। দেখা যায় যেখানে খরচ করা দরকার সেখানে হচ্ছে না। অনেকক্ষেত্রেই খরচের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কৃষিখাতে অর্জন রাখতে নিশ্চিত করা জরুরি যেন কৃষি ভর্তুকি হ্রাস না পায় এবং একই সাথে যেন ভর্তুকি বৈষম্য হ্রাস পায়।’
নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন বিসেফ ফাউন্ডেশনের সহ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, ‘কৃষক জানে না কোথায় ভর্তুকি। আউশ মৌসুমে কিছু প্রণোদনা প্রত্যক্ষভাবে যায় কৃষকদের কাছে। এর ফলাফল কৃষক পাচ্ছেন তেমনি আউশ চাষে জমিও বাড়ছে।’
অধ্যাপক রেজাউল বলেন, ‘কৃষি পণ্য পরিবহনে প্রণোদনা এবং গণ পরিবহনে কৃষি পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। সড়ক পরিবহনে যে নৈরাজ্য আছে তার শিকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে সবাই। রেলওয়ে, ওয়াটারওয়ে, বিআরটিসির মতো সংস্থাগুলো কৃষিপণ্য পরিবহনে ভূমিকা রাখতে পারে। এর ফলে পরিবহন ব্যয় কমে আসবে। তাতে কৃষক বড় শহরে পণ্য নিয়ে আসতে উৎসাহী হবে। এতেও তার মুনাফা বাড়বে।’
কৃষকের খরচ কমিয়ে আনা এবং উৎপাদন বাড়াতে প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। কৃষি উপকরণ, বিশেষ করে সার, ডিজেল, বিদ্যুতে আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানো হয়েছে। কৃষি যন্ত্র কেনাও (কম্বাইন হারভেস্টার, রাইস প্ল্যানটার, ড্রায়ার প্রভৃতি) অঞ্চল ভেদে ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকিও দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু প্রকৃত কৃষকদের কাছে এই ভর্তুকির অর্থ পৌঁছায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রকৃত কৃষকদের হাতে পৌঁছানোরও উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করে অর্থনীতিবিদরা।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামসুল আলম বলেন, ‘অনেকে বলে কৃষিতে বাজেট বাড়ানো প্রয়োজন। আসলে প্রয়োজন যে বাজেট দেওয়া হয় সেটা খরচের সক্ষমতা তৈরি। বাজেট বাড়ানো সমস্যা নয় সমস্যা দক্ষতা বাড়ানো।’
কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকও এ বিষয়ে একমত। তিনি বলেন, ‘কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ভর্তুকির অর্থ যৌক্তিকভাবে ব্যবহার করা হবে। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ভর্তুকি আরো বাড়ানো হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য খাতেও ভর্তুকির জন্য অর্থ বেশি পরিমাণে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ বিষয়গুলোয় সরকার অনেক বেশি মনযোগ দিচ্ছে।’
কৃষির আধুনিকায়নে যান্ত্রিকীকরণে নজর দেওয়ার কথাও জানান মন্ত্রী। বলেন, কৃষিকাজে কৃষি শ্রমিক এখন একটা বড় সমস্যা। এর একমাত্র সমাধান কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। থেকে যাওয়া অর্থ এখন থেকে এই উদ্দেশ্যে ব্যবহারের পরিকল্পনা আছে সরকারের।