খবর৭১ঃ সেবাপ্রার্থীদের কাছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এখন থেকে এসি ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) পদে বেশিরভাগ পোস্টিং দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়। যাদের বিরুদ্ধে জনহয়রানি কিংবা ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশেষ মনিটরিং কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী নিজেই।
তার তত্ত্বাবধানে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সারা দেশে কর্মরত চার শতাধিক এসি ল্যান্ডের কার্যক্রম তদারকি করছেন। এছাড়া সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে সরাসরি অভিযোগ নিতে শিগগির ভূমি মন্ত্রণালয় বিশেষ অ্যাপ চালু করবে।
প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তাদের (সহকারী কমিশনার) এসি ল্যান্ড পদে পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। আবার ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের এ ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনারদের ওপর হস্তান্তর করায় মূলত উপজেলা ও মহানগরে এসি ল্যান্ডের শূন্যপদে পোস্টিং দিয়ে থাকে বিভাগীয় কমিশনার অফিস। কিন্তু এসি ল্যান্ড পদায়ন নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে এন্তার অভিযোগ। বিশেষ করে রাজধানী ছাড়াও যেখানে জমির দাম যত বেশি সেখানকার এসি ল্যান্ডের পদটি তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এসব কথিত প্রাইজ পোস্টিং পেতে নবীন কর্মকর্তাদের অনেকে সারাক্ষণ তদবিরে মশগুল থাকেন। প্রশাসন ক্যাডারের এন্ট্রি পদের এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে আছেন খুবই প্রভাবশালী। যারা রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানারকম খুঁটির জোরে শুরু থেকেই রাজধানী ও এর আশপাশে থাকতে চান। আবার কারও চাই একেবারে কর্মস্থলের নাম উল্লেখ করে নির্ধারিত প্রাইজ পোস্টিং। অথচ এ রকম নানা বিড়ম্বনাসহ এসি ল্যান্ড অফিসের সব ব্যর্থতার দায় বর্তায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওপর। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় এমন দায়ভার আর নেবে না। এজন্য প্রথমবারের মতো মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি পোস্টিং দেয়া শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ অবস্থায় এসি ল্যান্ড নিয়োগের ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয় এখন আর রাবার স্টাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হবে না। সব স্থানে সম্ভব না হলেও যেসব এলাকা থেকে হয়রানি-দুর্নীতির অভিযোগ বেশি আসবে এবং তা যদি প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়, তাহলে সেখানে সরাসরি এসি ল্যান্ড পদে পদায়ন করবে মন্ত্রণালয়। বিভাগীয় কমিশনার অফিসে আর ন্যস্ত করা হবে না। এছাড়া প্রয়োজন হলে এক স্টেশন থেকে অন্যত্র রদবদলও করে দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করাসহ তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসনে চিঠি দেবে।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি নিজেই মনিটরিং করছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ তিনি বলেন, বিগত মেয়াদে সাইফুজ্জামান চৌধুরী যখন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি প্রায় প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসি ল্যান্ড অফিসে আকস্মিক পরিদর্শন করতেন। এর ফলে কিছুটা সফলতাও আসে। এবার ভূমিমন্ত্রী হওয়ার পরও একইভাবে তদারিক অব্যাহত রেখেছেন। এভাবে সরেজমিন জনগণের কাছ থেকে পাওয়া নানা অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে মন্ত্রণালয় মনে করছে, এসি ল্যান্ড পদে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও গণমুখী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এসি ল্যান্ড যত বেশি প্রো-পিপল ও দক্ষ হবেন ওই এলাকার সেবাপ্রার্থীরা তত দ্রুত ভালোমানের সেবা পাবেন। তিনি জানান, এসব দিক বিচেনায় নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় সরাসরি এসি ল্যান্ড পদে পোস্টিং দেয়া শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, জনগণকে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন তহশিল অফিস ছাড়াও এসি ল্যান্ডের দফতর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ অফিসগুলোতে নানাভাবে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ এখন প্রতিষ্ঠিত। অনেকের কাছে বিষয়টি এক রকম গা-সহা হয়ে গেছে। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন এসি ল্যান্ড সততা ও দক্ষতার সঙ্গে ভালো সেবা দিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। রাজশাহীর পবা উপজেলার এসি ল্যান্ড শাহাদাত হোসেনের ‘মাটির মায়া’র কথা এখনও অনেকে গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি তার দফতরের সামনে টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে সেবা প্রার্থীদের সেবা দিতেন। তার সেই ছোট্ট অফিসের দেয়ালে লেখা ছিল ‘আপনাদের এসি ল্যান্ড’। সেবা প্রার্থীরা টোকেন সংগ্রহ করে দুই সারিতে বসে থাকতেন সেবা নেয়ার জন্য। প্রশাসনের ইতিহাসে এমন ঘটনা খুবই বিরল ও গৌরবের।