মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
সৈয়দপুর উপজেলায় চলতি বছর বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে ৪৮ হাজার ৭৯৪ মেট্রিক টন। উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকা মিলে ওই পরিমান ধান উৎপাদন হয়েছে। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মিলে এ উপজেলায় চাষীর সংখ্যা ৩০ হাজার। অথচ সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ৪৯১ জন চাষী। ফলে সরকারি মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ২৯ হাজার ৫০৯ জন কৃষক। এসব কৃষককে শেষমেষ খোলা বাজারে ধান বিক্রি করতে হবে। কিন্তু হাটে বাজারে ধানের দর পতনে তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। বরং বড় অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদে পরিবারের কেনাকাটা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তারা। আয়ের একমাত্র উৎস ধানের দাম না থাকায় কৃষক পরিবারগুলোর পথে বসার যোগাড় হয়েছে।
সৈয়দপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে রাহাদ রিমন জানান, এ বছর ২৬ টাকা কেজি দরে ২৩৬ মেট্রিক টন ধান ও ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে দুই হাজার ৩৭৬ মেট্রিক টন চাল কেনা হবে। এদিকে ২৫ এপ্রিল থেকে চাষীদের কাছ থেকে ধান কেনার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সৈয়দপুরে ধান কেনা শুরু হয়েছে ২৬ দিন পর। গত ২১ মে সৈয়দপুরে ধান কেনার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এদিন সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়া, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন ও সানজিদা বেগম লাকি এবং উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ উপস্থিত থেকে ধান ক্রয় অভিযান শুরু হয়। মাত্র তিনজন কৃষক এক হাজার ৪৪০ কেজি ধান সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করার সুযোগ পান। সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ক্রয় অভিযান বিলম্বে শুরু করা প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা নূরে রাহাদ রিমন জানান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এমন অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে। গত ২১ মে ধান ক্রয় অভিযান শুরু হলেও বাজারে দামের কোন প্রভাব পড়েনি। হাটে বাজারে বর্তমানে মোটা জাতের ধান ৪০০ টাকা ও ২৮ জাতের চিকন ধান ৫২০ টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে।
এ নিয়ে কথা হয় বোতলাগাড়ী ইউপি’র পোড়াহাট গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ফজলুর রহমান, কামারপুকুর ইউপি’র ধলাগাছ গ্রামের জাহাঙ্গীর, বাঙালিপুর ইউনিয়নের সাদেক, খাতামধুপুরের কাল্ঠু ও কাশিরাম ইউনিয়নের আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তারা জানান ধান কাটা মাড়াই শেষ হওয়ার পর সরকারিভাবে ধান ক্রয় অভিযান শুরু হয়েছে। ছোট কৃষকদের ঘরে বিক্রি করার মত আর ধান নেই। কাটা মাড়াইয়ের সময়ই কৃষি শ্রমিকের মজুরী, ঋণ পরিশোধ ও সাংসারিক খরচ মেটাতে লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করতে হয়েছে। সরকারের দেয়া বাড়তি মূল্য আমাদের মত প্রান্তিক ও ছোট কৃষকের ভাগ্যে জোটেনি। এখন সরকারি মূল্যে সুবিধা পাচ্ছেন মধ্যম ও ধনী কৃষক ও ফড়িয়ারা। তাদের মতে মিলাররা সিন্ডিকেট করে ধান কেনায় কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তাদের মন্তব্য ধান কাটার মওসুমের শুরুতে সরকার ধান ক্রয় অভিযান শুরু করলে প্রান্তিক ও নি¤œবিত্ত চাষীরা লাভের মুখ দেখতো। পানির দরে ধান বেচতে হতো না।
ধানের উৎপাদনের সঙ্গে ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গতি না থাকা প্রসঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোমায়রা মন্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, চলতি বোরো মওসুমে সৈয়দপুর উপজেলায় ৩০ হাজার কৃষক বোরো আবাদ করেছে। উপজেলা ক্রয় কমিটির নির্দেশনা মত উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার ৪৯১ জন কৃষকের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জন কৃষকের নাম ক্রয় কমিটিতে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট তালিকা শিগগির জমা দেয়া হবে। তার মতে উপজেলার ক্রয় কমিটি যেসব কৃষকের নাম ক্রয় কেন্দ্রে পাঠাবে তাদের ধান সেখানে কেনা হবে। প্রতিজন কৃষক ৮০ কেজি থেকে ৪০০ কেজি পর্যন্ত ধান সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু উপজেলা ক্রয় কমিটির তালিকার বাইরে থাকা অবশিষ্ট কৃষকদের ধান বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির। তারা বিষয়টি দেখবেন।
জানতে চাইলে, উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়া জানান, সরকারি ক্রয় নীতিমালার আলোকে ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর তালিকার বাইরে থাকা কৃষকের ধান ক্রয় নির্ভর করবে। বর্তমান নীতিমালায় আমাদের তরফ থেকে কিছু করার নেই।