খবর ৭১ঃ পরনে লুঙ্গি-গেঞ্জি। পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল। কাঁধে রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যবহৃত বেলচা। দেখে মনে হবে যেন রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় মহল্লায় রাজমিস্ত্রির কাজ খুঁজে বেড়ান তিনি’ না, এটা কোনো রাজমিস্ত্রির গল্প না। এটি একটি হত্যামামলার আসামি ধরার গল্প।
গত ১৪ মার্চ’১৯ যে কোন সময় রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকার ধনিয়ায় একটি ভাড়া বাসার নিচ তলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে শারমিন আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করে পালিয়ে যায় তার ঘাতক স্বামী মাসুদ হাওলাদার। এ সংক্রান্তে শারমিনের ভাই বাদী হয়ে কদমতলী থানায় গত ১৫ মার্চ’১৯ একটি হত্যা মামলা করেন।
হত্যা মামলা রুজু হওয়ার পর মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় কদমতলী থানার এসআই মোঃ লালবুর রহমান পিপিএম এর উপর। দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্তকারী অফিসার (আইও) এসআই লালবুর ভিকটিমের স্বামী মাসুদ হাওলাদারের মোবাইল ট্রাক করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর মামলার আইও আসামীর আত্মীয় স্বজনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে হত্যাকারীর অবস্থান সনাক্তের চেষ্টা করতে থাকে। এক পর্যায়ে নিকট আত্মীয়ের মোবাইলে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আসামীর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন এসআই লালবুর।
তদন্তকালে জানতে পারে ভিকটিম শারমিনের স্বামী মাসুদ পুরাতন প্যান্ট-শার্টের ব্যবসা করত। এ ব্যবসার জন্য সে শনির আখড়া দোকানের পজিশনও নিয়েছিল। ব্যবসা শুরু করার আগেই সে নিজ স্ত্রীকে হত্যা করায়, দোকানের পজিশনের টাকা ফেরত নিতে দোকানের মালিকের পক্ষের লোকের সাথে যোগাযোগ করে। দোকানের অগ্রিম টাকা ফেরত নিতে ডেমরা থানাধীন মিন্টু চত্বর এলাকায় মাসুদ আসে। ইতোপূর্বে এসআই লালবুর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দোকান মালিক পক্ষের লোকের সাথে যোগাযোগ করে হত্যাকান্ডের বিষয় তাদের জানিয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে বলেন। যেই কথা সেই কাজ ১৯ মে ২০১৯ বেলা ২ টার দিকে মাসুদ তার দোকানের এ্যাডভান্সের টাকা নিতে মিন্টু চত্বরে আসতে চাইলে মালিক পক্ষের ঐ ব্যক্তি এসআই লালবুরকে সংবাদ দেয়। সংবাদ পাওয়া মাত্রই মামলার আইও এসআই লালবুর ও এএসআই মোঃ জসিম ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুঁটে যায়। এরআগে দোকানের মালিক পক্ষের লোক এসআই লালবুরকে জানায় মাসুদ অনেক চতুর লোক। সে তার আশপাশে কোন ভালো পোশাক ও চালচলনের কাউকে দেখলে দ্রুত ছটকে পড়ে। এই কথাটি মাথায় রেখে এসআই লালবুর ছদ্মবেশ ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তানুযায়ী রাজমিস্ত্রীর পোশাকে মিন্টু চত্বর এলাকায় অবস্থান করতে থাকে এবং দোকান মালিক পক্ষের লোকের উপর নজর রাখে এসআই লালবুর ও এএসআই জসিম।
অপেক্ষার একপর্যায়ে চলে আসে সেই মোক্ষম সময়। এসআই লালবুর দেখে দূর থেকে একটি লোক মুখে মাস্ক পড়া অবস্থায় দোকান মালিক পক্ষের লোককে সালাম দিচ্ছে। ঘটনাক্রমে হত্যাকারী মাসুদ এসআই লালবুর ও এএসআই জসিমের পাশেই অবস্থান করছিল। কোন কালক্ষেপন না করে মাসুদকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরেন এসআই লালবুর। হঠাৎ জনসম্মুখে এমন ঝাপটে ধরার কারণ স্থানীয় লোকজন জানতে চাইলে নিজের পরিচয় দিয়ে এসআই লালবুর বলেন যাকে ধরা হয়েছে সে হত্যা মামলার আসামী। তাৎক্ষণাত পুলিশের এমন কাছের জন্য স্থানীয়দের প্রসংশায় প্রশংসিত হন কদমতলী থানা পুলিশের এই চৌকস অফিসার।
হত্যার সময়ের চেহারা সাথে গ্রেফতারকালীন চেহারার তারতাম্য থাকার কারণ জানতে মাসুদকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, তার চেহারা ছিল অনেক ফর্সা এবং দাড়ি-গোঁফহীন। নিজেকে গোপন রাখতে সে তার চেহারার পরিবর্তন এনেছে। চেহারা পরিবর্তন করতে সে দিনের বেশিরভাগ সময় রোদে থাকত যাতে করে ফর্সা রং কালোতে পরিনত হয়। সেই সাথে মুখে রেখেছিল বড় দাড়ি-গোঁফ, যাতে করে পুলিশ বা অন্য কেউ তাকে চিনতে না পারে।
গ্রেফতারকৃত মাসুদ হাওলাদার গত ২০ মে ২০১৯ বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
সূত্রঃ ডিএমপি নিউজ