খবর৭১ঃ এবার চলন্ত বাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি’র চেষ্টা করেছে বাসের হেলপার। বাস থেকে লাফ দিয়ে কোনরকমে জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষা করেন ওই শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে নগরীর কোতায়ালী থানায় একটি মামলা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে পৌনে ৫টার দিকে নগরীর স্টেশন রোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাধীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে নগরীর নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ৩নং রুটের বাসে ওই ছাত্রীটি বাস-হেলপারের লাঞ্ছনার শিকার হন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী ঘটনার দিন বিকেলে ক্লাস শেষ করে আনুমানিক ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ১ নং গেইট হতে ৩ নং বাসে ওঠেন। বাসটি নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় পৌঁছালে ভুক্তভোগী ছাড়া সকল যাত্রী একে একে নেমে গেলে তিনি একা হয়ে যান।
এসময় হঠাৎই বাসটি তার রুট পাল্টে স্টেশন রোডের দিকে চলতে শুরু করে। তখন ভুক্তভোগী মেয়েটি নিরাপত্তার স্বার্থে বাস ড্রাইভারকে বাস থামাতে বললে হঠাৎই বাসের হেলপার তার দিকে ধেয়ে যায় এবং তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। তখন দম বন্ধ হয়ে আসলে মেয়েটি আত্মরক্ষার্থে তার হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে হেলপারটিকে আঘাত করে চলন্ত বাস থেকেই লাফ দেয়। এবং এক রিক্সাওয়ালার সাহায্যে শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে বাসায় ফিরেন।
এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাত ৪টা ৫০ মিনিটে ওই ছাত্রী ফেসবুকে ইংরেজিতে একটি পোস্ট দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেই পোস্টে বাস-সহকারীর যৌন হয়রানির চেষ্টা, তাতে চালকের ইন্ধন এবং জীবনের বিনিময়ে সম্ভ্রম রক্ষায় তার সাহসী পদক্ষেপের বর্ণনা দেয়ার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন; বলেন, ‘এদেশে আর থাকবো না ভাই।’
ঘটনার সময় বাসের ড্রাইভারটিও ‘মেয়েটাকে ধর ধর’ বলে হেলপারকে উৎসাহ যোগাচ্ছিল বলে ওই ছাত্রী ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সংগঠন ইয়ং ইকনোমিস্ট সোসাইটি (ইয়েস) এর সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী থানায় মামলা করেছে। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হোক। যাতে করে দেশের অন্য কোথাও কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না করে।’
এদিকে বাস সহকারী কর্তৃক যৌন হয়রানির চেষ্টার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরীর পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করেছি। এই ঘটনায় শুক্রবার বিকেল ৪ টার দিকে ওই শিক্ষার্থী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেছে। আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আজ বিকেলে ঘটনাটি শোনার সাথে সাথে আমি পুলিশ সুপার ও ডেপুটি পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি জানেন। কঠিন একটা মামলা হয়েছে। তারা পরিবহন মালিকদের ডেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আসামীদের বের করে আনার চেষ্টা করছেন। আমরা বলেছি যত দ্রুত সম্ভব আসামীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে।’