খবর ৭১ঃ রাজত্ব ফিরছে বিলুপ্তপ্রায় ১৯ প্রজাতির দেশি মাছের। এর মধ্যে রয়েছে বাটা, ভাঙন, কালিবাউশ, গনিয়া, মহাশোল, মহিনী বাটা, বাঘা আইড়, ঘাওরা, সাদা ঘনিয়া, তেলে গুলশা, পারসে, পোয়া, মধু পাবদা, মাগুর, সরপুঁটি, বাইন, টাকি, নোনা টেংরা ও বোয়াল। ইতোমধ্যে এসব মাছের প্রজনন ও আধুনিক চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
তথ্য মতে, দেশে ২৭০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ পাওয়া যায়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) হিসাবে, এর মধ্যে বিলুপ্তির পথে ৫৪ প্রজাতি। তবে এসব মাছ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বাড়াতে ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি রিহ্যাবিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় ১৮টি জলাশয়ে ব্রুড মাছ ও পোনা অবমুক্ত করে সফলতার মিলেছে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু জানান, মৎস্য খাত দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ অবদান রাখছে (বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ ২০১৮)। ইতোমধ্যে দেশি মাছের প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প। বিজ্ঞানীরাও নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব মাছ রক্ষায়। প্রকল্পের সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে।
এতে দেশীয় বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রাপ্যতা আরও বাড়বে, দামও হবে সহনশীল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ সালে মাছের উৎপাদন ৪১ দশমিক ৩৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে, যা ২০১৬-১৭ সালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার (৪০ দশমিক ৫০ লাখ টন) চেয়ে ৮৪ হাজার টন বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪২ দশমিক ৭৭ লাখ টন মাছ উৎপাদন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার তার ২০২১ সালের ভিশনে দেশের মাছের উৎপাদন ৪৫ লাখ টন নির্ধারণ করেছে, যা বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে ১০ লাখ টন বেশি।
জানা গেছে, দেশি প্রজাতির ছোট মাছের প্রজাতি সংরক্ষণ, প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য ৩৮টি জেলার ৭৫টি উপজেলার ১৩৬টি প্রাকৃতিক জলাশয় পুনঃখনন করা হয়েছে। এসব জলাশয়ে অবমুক্ত করা হয়েছে ১৫৪ টন পোনা। ৫৭টি সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারে দেশি প্রজাতির ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব মাছ চাষ ও ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৪৬৬ চাষিকে। এ ছাড়া দেশি প্রজাতি মাছের উৎপাদন বাড়াতে কাপ্তাই লেকে প্রজনন মৌসুমে তিন মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বে যে চারটি দেশ মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করবে, তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এ দেশের প্রতিবেশ ব্যবস্থা মিঠাপানির মাছ চাষের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।
এদিকে মৎস্য অধিদপ্তর আরও জানায়, মমনসিংহ, বগুড়া ও কুমিল্লার পুকুরে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে মাছের চাষ রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। বিপন্নপ্রায় মাছের প্রজাতির সংরক্ষণ, অবাধ প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে স্থাপন করা হয়েছে ৫৩৪টি মৎস্য অভয়াশ্রম।
এর মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় এবং বিপন্ন ও দুর্লভ প্রজাতির মাছ, যেমন একঠোঁট, টেরিপুঁটি, মেনি, রানী, গোড়া গুতুম, বামোস, কালিবাউশ, রিঠা, কাজলি, চাকা, গজার, ইত্যাদির তাৎপর্যপূর্ণ পুনরাবির্ভাবের চেষ্টা চলছে। এমনকি অভয়াশ্রম-সংশ্লিষ্ট জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত। মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘গত কয়েক দশকে দেশে চাষ করা মাছে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে। শিং, মাগুর, পাবদার মতো আরও বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ হারিয়ে যেতে বসেছিল।
গবেষণার মাধ্যমে এ জাতসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছের পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা এসেছে। চাষ করা মাছ চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ পূরণ করে।’