উত্তরের সহস্রাধিক গ্রাম পানির নিচে

0
665

খবর৭১: ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে বেশ কয়েকদিন ধরে ডুবে আছে উত্তরবঙ্গের সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম লালমনিহাট, নীলফামারীসহ কয়েকটি জেলার শতাধিক গ্রাম। এরই মধ্যে তিস্তা ব্যারেজের বেশ কয়েকটি গেট খুলে দিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কুচবিহার আর জলপাইগুড়িকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে তারা নতুন করে ডুবিয়েছে বাংলাদেশের সহস্রাধিক গ্রাম।

সোমবার (১০ জুলাই) পশ্চিমবঙ্গের গাজোলডোবা তিস্তা বাঁধের বেশ কয়েকটি গেট খুলে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ঢুকেছে ৩ হাজার কিউসেক পানি। ফলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিপদসীমার ২০ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই সব এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ অংশে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ সেন্টিমিটার। নীলফামারীর ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ অবস্থায় উত্তরবঙ্গে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। আউশ ধান, আখ, পাট ও শাক-সবজিসহ ফসলি জমি ও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাচ্ছে। এসব জেলার কয়েক শতাধিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শতাধিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েক লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে। কিছু বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ উঁচু বাঁধে কিংবা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। মানুষের খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিরাজগঞ্জ : সোমবার (১০ জুলাই) সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ অংশে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ সেন্টিমিটার। এ দিকে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি এবং সদর উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

বগুড়া : যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা এবং ধুনট উপজেলার ২৫ থেকে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর ডান তীরবর্তী কামালপুর, কুতুবপুর ও চন্দনবাইশা ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় লোকজন বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

নীলফামারী : তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রবিবার (০৯ জুলাই) মধ্যরাত থেকে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্ট বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে, হঠাৎ করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা, পশ্চিম বাইশপুকুর, পূর্ব বাইশপুকুর, কিসামত ছাতনাই, পূর্বছাতনাই ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর, বাঘেরচর, টাবুর চর, ভেন্ডাবাড়ী, ছাতুনামা, হলদিবাড়ী, একতারচর, ভাষানীর চর, কিসামতের চর ও ছাতুনামা চর। এসব গ্রামের অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে উচুঁ ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি রবিবার (০৯ জুলাই) থেকে ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বালাসী-উড়িয়া সড়কসহ বেশ কিছু কাঁচা রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ এলাকার পাট, আমন বীজ তলাসহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

লালমনিরহাট : ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার (১০ জুলাই) সকাল ১১টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিকের (৫২.৪০ সে.মি.) চেয়ে ৩২ সে.মি. উপরে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ১৫/২০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা।

তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ভারত গজল ডোবা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় রবিবার (৯ জুলাই) রাতে তিস্তা পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সোমবার (১০ জুলাই) সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। পরবর্তী ৩ ঘন্টা পর সকাল ৯টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর।

রংপুর : টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার নদির পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা শাহাজাহান আলী জানান, ‘অষ্টমীরচর ইউনিয়নের মুদাফত কালীকাপুর, ডাটিয়ারচর, নটারকান্দি ও দিঘলকান্দিসহ ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হয় বউ-বাচ্চা নিয়ে আর বাড়িতে থাকা যাবে না।’ রৌমারী উপজেলার সাহেবের আলগা বিজিবির ক্যাম্প সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীর রক্ষা প্রকল্পের ৯০ মিটার বাধ ধসে গেছে।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here