খবর৭১: অর্থপাচারের মামলায় কারাবন্দি ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন ও ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকে জামিন দেয়া হলে তারা বেরিয়ে গিয়ে একটি টাকাও তারা পরিশোধ করবে না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বরং অভিযুক্তরা জামিন পেলে উল্টো আবারও বিদেশে অর্থপাচার শুরু করবে।
সোমবার (১০ জুলাই) এ সংক্রান্ত আদেশের সংশোধন চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানির সময় ডেসটিনির আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন আপিল বিভাগ।
আদালত বলেন, ‘ডেসটিনির বিরুদ্ধে ৩ হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই মামলায় ডেসটিনির চেয়ারম্যান ও এমডি জামিনে একবার কারাগারের বাইরে গেলে তারা এক টাকাও জমা দিবে না। টাকা দেয়া তো দূরে থাক তারা আরও অর্থ বাইরে পাচার করে দিবেন। তাদেরকে তখন খুঁজেও পাওয়া যাবে না।’
ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদকে উদ্দেশ্যে করে আপিল বিভাগ বলেন, ‘আপনি তো এর আগে হলমার্কের জেসমিন টাকা দেয়ার শর্তে জামিন নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই টাকা তো দেননি। পরে আবেদন দিয়ে ওই আদেশও প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। সেটা আমাদের জানা আছে।’
তখন ব্যারিস্টার রোকন বলেন, ‘আমি তো জেলে আছি। গাছ তো রয়েছে গাছের জায়গায়। সেটা ছাগলে খেয়েছে না মারা গেছে তা তো জানি না। আমাকে দুই মাসের জামিন দিন।’
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আপনি একবার জামিনে বেড়িয়ে গেলে আপনাকে আর পাওয়া যাবে না।’
আদালত জানতে চান- আপনার একাউন্টে কত টাকা আছে? জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘১৪৭ কোটি টাকা আছে।’
আদালত আরও বলেন, ‘আপনারা শর্ত অনুযায়ী কিছু টাকা পরিশোধ করুন। আপনাদের সব সুবিধা দেব।’
এরপর আদালত ব্যাংক হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিয়ে আগামী রবিবার দিন ধার্য করে দেন।
এর আগে গত বছরের ১৩ নভেম্বর ডেসটিনি গ্রুপের ট্রি প্ল্যানটেশনের আওতায় থাকা ৩৫ লাখ গাছ ৬ সপ্তাহের মধ্যে বিক্রির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
ওইদিন আদালত আদেশে বলেছিলেন, ৩৫ লাখ গাছ বিক্রির ২৮০০ কোটি টাকা সরকারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে। টাকা পাওয়ার পর ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন ও ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনকে আপিল বিভাগ জামিন দেবেন বলে আদেশে বলা হয়।
তবে গাছ বিক্রি করে যদি ২৮০০০ কোটি টাকা না হয় তাহলে কমপেক্ষ ২৫০০০ কোটি টাকা সরকারকে দিলেই জামিন মিলবে ডেসটিনির চেয়ারম্যান-এমডির। কিন্তু আদালতের শর্তমত টাকা জমা না দেয়ায় এখনও কারাবাসে আছেন ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন।
উল্লেখ্য, প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কলাবাগান থানায় এই দুই মামলা দায়ের করে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
এই দুই আসামি ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই থেকে তারা কারাগারে আছেন।
এরপর ২০১৪ সালের ৪ মে এই দুই মামলায় মোট ৫১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
খবর৭১/এস: