শার্শা উপজেলার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দূর-দূরান্তরে পিকনিকে যাবে নাঃ শেখ আফিল উদ্দিন এমপি

0
657

শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : যশোর-১(শার্শা)’র সাংসদ আলহাজ¦ শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে দীর্ঘ ১০টি বছর ধরে আমি ধূলাবালি আর কাঁদা মাটিকে উপেক্ষা করে নিজ ব্যবসায়ীক সময় বিসর্জন দিয়ে শার্শা উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের মাঠে ময়দানে বসে মায়েদের নিয়ে মা সমাবেশ করেছি। অনুভব করেছি শিক্ষিত জাতি গঠন ছাড়া এদেশর উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। তাইতো শিক্ষার বিপ্লব ঘটাতে প্রতিনিয়ত মায়েদের রান্না খাওয়ার সময়ে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায় ভিক্ষা চেয়েছি। বলেছি, প্রত্যেক ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জে¦লে আমাকে “একটি করে” সুসন্তান দাও। বিনিময়ে আমার সকল ধরনের সহযোগিতা শার্শাবাসীর পাথেয় হয়ে থাকবে। শুক্রবার সকালে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত অত্র স্কুলের পিকনিক ট্রাজেডিতে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ৯ শিশু শিক্ষার্থীর স্মরণে শোক সভায় প্রধাণ অতিথির বক্তব্যের সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে একথা বলেন তিনি।

বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ মজনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত স্মরণ সভায় শেখ আফিল উদ্দিন এমপি আরো বলেন, শার্শাবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম তার সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে সুসন্তানে পরিণত করতে হবে। আশায় বুক বেঁধেছিলেন সকল মায়েরা-বাবারা। সন্তানকে বলেছিলো তোকে ডাক্তার বানাব, ইঞ্জিনিয়ার বানাব, দেশের বড়ো অফিসার বানাব। কিন্তু অমানিশার এক অন্ধকারে যখন নয়, নয়টি শিশু লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরল তখন কে দেবে তার মাকে শান্তনা? দু’নয়নে কেবল জল। বাবা হতবাক! বুকফাটা আর্তনাদে আঁছড়ে পড়ছে মা। আর কথা বলতে পারেননি সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন। মাঝে মধ্যে ঢুকরে ঢুকরে কেঁদে উঠলেন আর উপস্থিত হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও মা-বাবাদের কাঁদিয়ে ফেললেন। ঘটনার ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এযেন সদ্য শিশু সন্তান হারানোর বেদনায় আবারো শোকের মাতম বয়ে যায় বেনাপোল জুড়ে। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আকাশ বাতাশ তরুলতা। মনের অজান্তে হলেও উপস্থিত প্রত্যেক মানুষের হৃদয় দুমঢ়ে-মুচড়ে ফেটে বের হতে চায় ঢুকরে উঠা কান্নার ঢেউ। যে আঁখিতে এতোদিন লুকিয়ে ছিল জল, তা যেনো বাঁধভাঙ্গা নদীর মতো উপচে বেয়ে পড়তে লাগল।

এসময় চশমা খুলে ছোখের কোণা মুছে আধো আধো বোলে শেখ আফিল উদ্দিন এমপি বলেন ক্ষমা করে দিও মা! আমরা পারিনি তোমার আদরের সোনামণি সুরাইয়া, জেবা, মিথিলা, রুনা আক্তার মীম, শান্ত ও সাব্বির হোসেন আঁখিকে বাঁচাতে। তবে, এখন থেকে শার্শা উপজেলার আর একটি স্কুল কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দূর-দূরান্তরে পিকনিকে যাবে না। তোমাদের শান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তারপরেও আমার সাধ্যের মধ্যে তাদের স্মরণে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন করে দেওয়া হবে। যেখানে ৯ কোমলমতী শিশু শিক্ষার্থীদের নামের উপর ৯টি শ্রেণী কক্ষ থাকবে। যেখান থেকে লক্ষ লক্ষ সুরাইয়া, জেবা, মিথিলা, রুনা আক্তার মীম, শান্ত ও সাব্বির হোসেন আঁখির মতো কোমলমতী শিশুরা শিক্ষা অর্জণ করে দেশের সেবা করবে। তুমি তাদেরকে দেখেই তোমার সন্তান শোক ভূলে থাকার চেষ্টা করো মা। এরাই হোক তোমার আদরের সোনামনি।

উক্ত শোক সভার আগে বেনাপোল পৌর ও ইউনিয়ন এলাকার সকল সরকারি-বেসরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গার্লস স্কুল, মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশাল এক র‌্যালী অত্র বিদ্যালয়ের সামনে থেকে বের হয়ে বাজার এলাকা প্রক্ষিণ শেষে আবারও বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এসে মিলিত হয় ৯শিশু শিক্ষার্থী স্মরণে স্মৃতী স্তম্ভে। সড়ক ট্রাজেডিতে নিহত ৯ শিশু শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন শেখ আফিল উদ্দিন এমপি। পরে, শিক্ষার্থীদের রুহের মাগফেরাত কামনায় কোরআন খতম, দুরুদ ও দোয়া কামনা করা হয়। দোয়া পাঠ করেন বেনাপোল মাহবুবা হক এতিম খানা হাফেজিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ খলিলুর রহমান।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৫-ই ফেব্রুয়ারি বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেহেরপুরের মুজিবনগরে পিকনিকে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে চৌগাছার ঝাউতলা কাঁদবিলা এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে। ঘটনাস্থলে নিহত হয় ৭ জন কোমলমতী শিক্ষার্থী। আহত হয় ৩/৪ জন শিক্ষকসহ আরো ৭০ জন শিশু শিক্ষার্থী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরও ২ শিক্ষার্থী।

ঘটনাস্থলে নিহতরা হলো, বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর দুই মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া (১০) ও তার বোন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী জেবা আক্তার (৮), একই গ্রামের ইউনুস আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মিথিলা আক্তার (১০), রফিকুল ইসলামের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রুনা আক্তার মীম (৯), লোকমান হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শান্ত (৯), গাজিপুর শ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির হোসেন (১০) ও নামাজ গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী আঁখি (১১)।

১৩ দিন পর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছোট আঁচড়া গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ইকরামুল (১১) ও সর্বশেষ দুর্ঘটনার ৩২ দিন পর ১৯ মার্চ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় একই গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়ানুর রহমান (১১)।

এসময় উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব নুরুজ্জামান, শার্শা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রব, শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও যশোর জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব এনামুল হক মুকুল, সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ নাসির উদ্দীন, বেনাপোল ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ বজলুর রহমান, শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও যশোর জেলা পরিষদের সদস্য অহিদুজ্জামান অহিদ, ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম সরদারসহ বেনাপোলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক বৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here