মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছা চলতি মৌসুমে ডালজাত খাদ্য মসুরের ব্যাপক চাষ হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের মাঠের পর মাঠে চাষ হয়েছে মসুরের। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ বছর মসুরের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১শ ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে মসুর চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
কৃষি নির্ভর উপজেলা হিসাবে খ্যাত যশোরের চৌগাছা উপজেলা। এখানে বছরের পুরো সময়টা জুড়ে কোন না কোন ফসল উৎপাদন হয়। আর মৌসুমি ফসল ফলাতে কৃষকরা বেশ পারদর্শী। চলতি মৌসুমে অত্র উপজেলাতে মশুর চাষ ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। যখন এ ফসল প্রায় বিলুপ্তির পথে তখন চাষ বৃদ্ধি পাওয়া অবশ্যই একটি ভাল দিক বলে অনেকে মনে করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে অত্র উপজেলায় প্রায় ৭শ ৮০ হেক্টর জমিতে মসুর চাষ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ১শ ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে কৃষক মসুর চাষ করেছেন। বাজারে মসুরের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষক দিন দিন এ চাষে ঝুকে পড়ছেন বলে সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন। স্বরুপদাহ, নারায়নপুর, জগদীশপুর, হাকিমপুর, পাতিবিলা ইউনিয়নসহ পৌর এলাকায় মসুর চাষ বেশ লক্ষনীয়। উপজেলার হুদা চৌগাছার কৃষক শাহাবুদ্বিদন বলেন, মসুর চাষ প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে যায়। বর্তমানে বাজারে মসুরের ব্যাপক চাহিদা দামও ভাল তাই দিন দিন মসুর চাষের দিকে কৃষক ঝুকে পড়ছেন। চলতি মৌসুমে মসুর খুব ভাল হয়েছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় তাহলে মসুরের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি মনে করেন।
সূত্র জানায়, মশুর ডাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খাদ্যশষ্য। এ ডালকে পানিতে সেদ্ধ করে তেল-মশলা সহযোগে রান্না করা হয় এবং ডাল মিশিয়ে ভাত খাওয়া হয়। মানবদেহে আমিষের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বলা হয়ে থাকে মসুর ডাল গরিবের গো-মাংস। কৃষকরা জানান, মসুর চাষে সাধারণত ২-৩টি চাষ ও ৪-৫টি মই দিয়ে জমি তৈরী করলে বীজের অঙ্কুরোদগম ও ফসলের বৃদ্ধি ভালো হয়। মশুর একটি লেগুমিনাস বা শুটি ফসল হওয়ায় বাতাসের নাইট্রোজেনকে খাবার হিসাবে ব্যবহার করে। বাংলা সনের সাধারণত কার্তিক মাস মসুর বপনের জন্য উৎকৃষ্ট সময়। তবে জমির অবস্থা বুঝে এ সময়ের আগে ও পরে মসুর বীজ বপন করা যেতে পারে। কৃষকরা বলেন, মসুর সারি বা ছিটিয়ে বপন করা যায়। তবে সারিতে বপন করলে পরিচর্জা করতে সুবিধা হয় এবং ফলনও বেশি পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দুরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার। মসুর বপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে বীজগুলো যেন মাটির কিছুটা নিচে পৌছায়। এতে বীজের অঙ্কুরদগম ভালো হয়, পাখি দ্বারা বীজ নষ্ট হয়না এবং বীজের অপচয় কম হয়। আমাদের দেশে মসুর নানা কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। মসুর ডাল খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু। ছোলা, মাষকলাই, মটর, খেসারি ইত্যাদির তুলনায় এটি অভিজাত। পশু খাদ্য হিসাবে মসুর ডাল কদাচিৎ ব্যবহৃত হয়। কেবল ভাতের সঙ্গে খাওয়ার জন্য পানি মিশিয়ে রান্না নয়, পিয়াজু, বড়া, চানাচুর ইত্যাদিতেও এর সমধিত ব্যবহার। মসুর ডাল সিদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যায়, আর চালের সঙ্গে মিশিয়ে ভুনা খিচুড়ী তেরী করা হয়। এছাড়া রান্না করা হয় মসুর ডালের চচ্চড়ি, দালমা, ডাল চচ্চড়ি, ডালের স্যুপ ইত্যাদি। মসুর ডাল ডায়াবেটিস রোগীর ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে বিশেষত যাদের ব্লাড সুগার খাবার গ্রহন করার পরেই বেড়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে মসুর ডাল খুবই উপকারী।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে ১শ গ্রাম মসুর ডালে জলীয় অংশ ১২ দশমিক ৪ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.১ গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৩৪৩ কিলোগ্রাম, আমিষ ২৫.১ গ্রাম. চর্বি ০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম, লোহ ৪.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি ৪৯ মিলিগ্রাম ও শর্করা ৫৯.০ গ্রাম আছে। তাই প্রতি দিনের খাবার টেবিলে মসুর ডাল রাখা খুবই উপকার বলে অনেকে মনে করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন বলেন, উপজেলাতে মসুর চাষ এক প্রকার বিলুপ্তি হতে বসেছিলো। সেখান থেকে কৃষককে মসুর চাষে মনোযোগী করা হযেছে। এ বছর মসুরের খুব ভার ফলন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। মসুর ক্ষেতে যেন কোন সংক্রামন দেখা না দেয় তার জন্য কৃষি অফিস সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।