বরুণ

0
1191

– মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

নির্জনে আমি বরুণ ফুলের বৃক্ষ হয়ে থাকি
লোকে ডাকে বালাই লামক অবিয়ুচ বর্না বিদাসি বলে
কোলে নিয়ে আমায় আকাশে তুলে রাখিয়াছে গলে,
সে হাজারো বছর আগের ইতিহাস।
সেই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ পেরিয়ে
জাপান অস্ট্রেলিয়া এশিয়া হয়ে বঙ্গে বাঁধিয়াছি ঘর
আফ্রিকা মহাদেশে আমি ফলজ উদ্ভিদ হয়ে থাকি
তোমরা কি আমায় দেখিতে চাও ?
যাও তাহলে সেই বহমান ঝর্ণাধারার তলে
নয়তোবা জলাভূমি ও নদীর তীরে চলে এসো
আমি তোমাদের অপেক্ষায় প্রহর গুণী।

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

আমি পত্রমোচী আছি দশ-পনেরো মিটার উঁচুতে –
তিন পত্রিকার যৌগিক রূপে ঝরাপাতা পাবে নিচুতে।
উপরে চকচকে নিচে ফ্যাঁকাসে বলে করে যায় ভুল
তোমার খোঁপায় দিবো কনক চাঁপার ফুল।
অবহেলা অনাদরে কেটে যায় দিন যদি হয় রঙীন,

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

মৌসুমী বসন্তের নতুন পাতার পরে গ্রীষ্মের শুরুতে
থোকা থোকা সাদা-বেগুনি আঁচযুক্ত বড় ফুল হয়ে থাকি
তবুও আমায় কেউবা দেয় ফাঁকি।
অভুক্ত দেহের বোঁটায় পাঁচটি পাপড়ি মেলে করিয়া মুক্ত
প্রখর রোদ্দুরে মাটি ফাটা ছিন্ন তরী করি যুক্ত।
দেহের চওড়া ফল গোলাকার-ডিম্বাকার শক্ত ও শাঁসাল
তাতে কি চলে আয় ত্রিশালে আমি ত্রিশূলের মশাল।

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

একসময় অন্য জাতের ফল পাকাতে আমার কদর ছিল
এখন আদর যতনে ঘাটতি দেখা যায় –
অড়হরের প্রাণের দুঃখটি ভুলে থাকা দায়।
জেনে রেখো আমি কিন্তু বহুরূপী নাম আমার বরুণ।
আমি ঋগ্বেদের ছয় আদিত্যের একজনা
মিত্র অর্যমা ভগ বরুণ দক্ষ এবং অংশ
হয়ে যাবে নির্বংশ।
আমি বৈদিক দেবতার কথা বলছি।
একদা আর্য ইরানীরা বরুণের পূজা অর্চনা করতেন
আমায় হৃদয়ের গহীনে রাখতেন।
আমি বেদের সহস্রলোচন নাম ধরে আছি –
জহরে কহরে বিষপানের পেয়ালায় পড়িয়াছিল মাছি
তাই দেখে আমি অট্ট হাসিতে হাসি।

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

আলোর দেবতা মিত্র গেলো কই ?
জলের দেবতা বরুণ একত্রে হয়েছে মিত্রাবরুণ।
আমি আবৃত কখনোবা খোলা আকাশি।
বিশাল বায়ুবীয় সমুদ্রের ঢেউ মাথার উপরে –
হুঁশিয়ার সাবধান পড়িবে তোমার গতরে।
ধ্বংস লীলা যদি না দেখিতে চাও তাহলে চলে যাও
মানুষের পায়ে পাও নহে ওহে বাও
কেনো পুষ্পের দিলে দু:খ ফোটাও।
থাম তোরা –
আকাশ সমুদ্রের মিলন মোহনায় ধ্যানে বসে রই
ঘরে ঘরে ফুটাবে কি খৈ ?

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

আমি দেহের মাঝে লুকিয়ে থাকা যমদূত
কোথায় পাপপূণ্যের বিচারক ?
ওহে বিবেক ওহে নির্দয় –
জেনে রাখো বরুণের ক্ষেত্র থেকেই সূর্যের উদয়।
কেউ বলে সূর্যকে বরুণের জ্বলন্ত চক্ষু
কখনোবা গায়ের রঙ জলবিন্দুর মতো সাদা
আবার মাঝে মাঝে গৌর মৃগের মত বলবান
থাকি সদা চলমান।

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

আমি পৌরাণিক লোকপাল দশদিকের অধিকর্তা বরুণ।
মহাসমুদ্র হতে উত্থিত সুরা পানে বারুনী
আমি বরুণ ঝড় তুলিবো ওহে তরুণী।
করিবো আমি নিঃস্ব –
আমি মহাভারতের মতে কর্দম ঋষির বৎস।

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

বলেছিলে দেখিবে কি অম্বুপতিকে ?
নয়তোবা অদিতি-নন্দন-পুত্র রূপে পাবে
তুমি কি আমার সাথে যাবে ?
সেই সেইখানে –
আমি বরুণের গান গাই।

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

উর্বশীর কামনায় কুণ্ডে উঠিলো ঝড়
উত্তাল ঢেউয়ের পর মহাপ্রলয় শিঙা বাজে অবিরত
দুনিয়া তছনছ,
প্রথমে অগস্ত্য ও পরে বশিষ্ঠ মুনির প্রসব,
আমি ভদ্রাকে উতথ্যের কাছে দিলাম ফিরিয়ে –
চলে যাই হাওয়ায় মিলিয়ে।
আমি ধর্মের জ্ঞানে পশুত্ব থেকে মনুষত্বে রূপান্তরিত হই
এরপর মনুষত্বের পরে দেবত্বে ঢুকে রই –
ওহে অসহায় ওহে পাষাণ
দেও জন্তু জানোয়ার তুলিবো কি হাতিয়ার?

আমি বরুণ –
নহি ! আমি অরুণ কান্তি বরুণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here