বড়াল নদীর জেলেদের বর্তমান চিত্র

0
805

পৃথিবীতে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। কালের বিবর্তনে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। সেই সাথে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের মন ও মানসিকতার। আরো পরিবর্তন ঘটেছে বিভিন্ন জাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে। কিন্তু পরিবর্তন ঘটছে না জেলে সম্প্রদায়ের জীবন যাত্রার মধ্যে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার অন্তর্গত আড়ানী পৌরসভার দ্বারপ্রান্তে অবস্থিত বড়াল নদী। এই নদীর তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে শতাধিক জেলের বসবাস। তারা এই নদীর উপর ভর করে তাদের জীবিকা অর্জন করে। এ নদীটি পদ্মা নদীর একটি শাখা। যেটি সবার কাছে বড়াল নদী হিসেবেই পরিচিত। এই নদীকে কেন্দ্র করে তারা আহার জোটায়। আড়ানী পৌরসভার ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডের জেলে কার্ড নিবন্ধনধারী প্রায় ৪০টি পরিবার বড়াল নদীর তীরে বসবাস করে। বর্ষার তর্জন গর্জন সহ্য করে উত্তাল নদীতে পাড়ি দিয়ে এরা নিয়মিত ছুটে চলেছে জীবিকার অন্বেষণে। নিজের জাল বা নৌকা তৈরি করে মাছ ধরার মত স্বামর্থ এদের নেই। তাই মহাজনের নৌকা ও জাল ভাড়া করে মাছ ধরে যা পায় তা দিয়েই সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করেন তারা।
পরিশ্রমের তুলনায় এদের উপার্জন অনেকটাই কম। বড়াল নদীতে ১২ মাসের ৪ মাস ভরপুর পানি থাকে। আর এসময় জেলেদের মুখে সুখের হাসি বিরাজ করে। তবে বাঁকী ৮ মাস নদীতে পানি কম থাকায় মাছ পাওয়া যায় না। তাই জীবনে হতাশা নেমে আসে। এই খরা মৌসুমে তারা কিভাবে চলবে? সংসার কীভাবে চালাবে? এ প্রশ্নের সমাধানে তারা কৃষি, রাজমিস্ত্রী ও ভ্যান চালানোসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে লীপ্ত হয়ে পড়ে।
মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী এসব জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও মাত্র কিছুসংখ্যক জেলে মাঝে মাঝে সে ভাতার মুখ দেখেন। আর অধিকাংশ জেলে বছরের পর বছর ধরে ভাতা বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেন মাঝি নয়ন হালদার।

আড়ানী পৌরসভার ষাটোর্ধ সুদনো হালদারের বাস চকসিংগার জেলে পল্লীতে। তাঁর পরিবারের প্রত্যেকেই এ পেশায় দক্ষ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে তাঁরা এই কাজটিই করে আসছেন। তিনি বলেন,“জেলে জীবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও পরিবার-পরিজনকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার এনে দিতে কষ্ট করে মাছ ধরতে হয় আমাদের। সরকার অসহায় জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা চালু করেছেন এবং এ নিয়ে সর্বত্র প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। তবে কিছু মানুষের অনিয়ম ও অবহেলার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে কোনো ধরনের ভাতা পাচ্ছে না জেলেরা। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আমাদের।”

জলীল মিঞার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাছ ধরার মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময়টাতে সরকারের বিশেষ ভাতা পায় নিবন্ধিত জেলেরা। তবে নিবন্ধিতদের মধ্যে কিছুসংখ্যক জেলেরা ভাতা পেয়ে থাকলেও অনেক দিন ধরে সেই ভাতা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে তাদের।

ভাতা বঞ্চিত জেলেদের অভিযোগ, কার্ডের পরিমাণ পর্যাপ্ত না হওয়ায় বেশিরভাগ জেলে এ আওতার বাইরেই রয়ে গেছে। যারা বর্তমানে নিবন্ধিত তালিকায় রয়েছে তারা নিয়মিত ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও কোনোই লাভ হচ্ছে না তাদের। বাধ্য হয়েই মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে বর্তমান সময়টাতে। তারা বলেন আমরা যদি আমাদের জেলে ভাতা ঠিকমত পাইতাম তা হলে অন্ততো খেয়ে পরে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারতাম।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here