খবর ৭১: অরিজিৎ দাস চৌধুরি, কলকাতা থেকে : ডোকা লা নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত পরিস্থিতি আরও হয়ে উঠল। জুম্মাবার চীনের তরফে সিকিমের বিতর্কিত ভূখণ্ডের একটি মানচিত্র প্রকাশ করা হয়। যার সঙ্গে ভারত ও ভুটানের দাবির কোনও মিল নেই। ওই মানচিত্র দেখিয়েই চীন দাবি করছে, ভারতীয় সেনা তাদের এলাকায় অনধিকার প্রবেশ করেছে। এদিকে, ডোকলাম মালভূমির বাস্তব পরিস্থিতি যাতে বল করা না হয়, রাস্তা তৈরি না করে যাতে স্থিতাবস্থা বজায় থাকে, চীনের কাছে সেই দাবি জানিয়েছে ভারত ও ভুটান। দু’দিন চুপ থাকার পর ভারত সরকারের তরফে কড়া বার্তায় বলা হয়েছে, চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে তারা উদ্বিগ্ন। ওই অঞ্চলে যে কোনও নির্মাণই স্থিতাবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে। যা ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। চীনকে সে কথা জানানোও হয়েছে। তবে তাতে কোনও কাজ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে বিশেষজ্ঞরা।
সীমান্ত নিয়ে চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। ভুটান-ভারত-চীন সীমান্তে ডোকলাম মালভূমি। অভিযোগ, ভুটানের অংশে ঢুকে চীন রাস্তা তৈরি করছে। কাজ বন্ধ করার জন্য ভারত কড়া হুঁশিয়ারি দিতেই চীন পাল্টা দাবি করেছে, ভারতীয় সেনা তাদের এলাকায় অনধিকার প্রবেশ করেছে। তারা না সরলে ভারতের সঙ্গে কোনও আলোচনা হবে না। নিজেদের দাবির সত্যতা প্রমাণে শুক্রবার চিনের বিদেশ দফতর একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। যেখানে ডোকলাম মালভূমি সংলগ্ন অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার সীমানা বাস্তবের চেয়ে আলাদা। চীনের মানচিত্রে দক্ষিণ দিকে অনেকটা অংশ নিজেদের বলে দেখানো হয়েছে। বেজিং গিমপোচি পাহাড় পর্যন্ত এলাকা বলে দাবি করেছে। অন্যদিকে, ভারত বাতাং লা পর্যন্ত নিজেদের বলে জানিয়েছে। তাদের সঙ্গে সহমত ভুটানও।
জুম্মাবার ভারত স্বীকার করেছে, এ বিষয়ে তারা ভুটান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। এমনকী, স্থিতাবস্থা বজায় রাখার স্বার্থে সেখানে রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ রাখতেও বলেছে চীনকে। বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ডোকা লা অঞ্চলে রাস্তা তৈরির চেষ্টা স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক। ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। কাজ বন্ধ না করলে পরিণতি খারাপ হবে বলেও ভারত হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ভারতের দাবি, ২০১২-য় সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ওই অঞ্চলের সীমানা চূড়ান্ত করতে চিনের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছিল। তিন দেশের সংযোগস্থলে কোনও এক পক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যদিও চীন বলেছে, প্রাচীন কাল থেকেই ডোকা লা তাদের অংশ। তাদের আরও দাবি, ১৮৯০ সালে সিকিম-তিব্বত নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে তাদের চুক্তিতেও নাকি সে কথা রয়েছে।
এই অবস্থায় চিনের মুখপাত্ররা কড়া ভাষা ব্যবহার করলেও অনেক সংযত ভাষায় জবাব দিয়েছে ভারত। তবে দৃঢ়ভাবে এটাও বুঝিয়ে দিয়েছে, ওই এলাকা থেকে ভারত সেনা প্রত্যাহার করবে না। স্থিতাবস্থা বদল করতেও দেবে না চীনা সেনাকে। নাথু লা দিয়ে তীর্থযাত্রীদের কৈলাস ও মানস সরোবর যাত্রা চীন আটকে দিয়েছে। কিন্তু সীমান্তে বাণিজ্য ও লিপু লেখ দিয়ে মানস সরোবর যাত্রা চলছে। কিন্তু বিষয়টির সঙ্গে ভুটানও জড়িয়ে যাওয়ায় সতর্কভাবে পদক্ষেপ করতে হচ্ছে ভারতকে। ব্রিটেন সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। অবশ্য চীন—ভুটানের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে দৌত্য চালাচ্ছেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। শোনা যাচ্ছে, উভয় পক্ষের কূটনীতিকরাই পরিস্থিতি ঠান্ডা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আগামী সপ্তাহে হামবুর্গে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। তবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ২০১৪-য় চুমারে চীনা সৈন্যর সীমান্ত লঙ্ঘনের সময় দিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছিলেন মোদি-জিনপিং। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আরও জটিল। কারণ, চীনা সেনা বারবারই একটু একটু করে অগ্রসর হয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করে। তারপর দু’পক্ষের সমঝোতার সময় ওই অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে। যুক্তি দেয়, প্রাচীন কাল থেকেই নাকি তা ওদের এলাকা ছিল। ভারতীয় সেনা সরলেই শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত অঞ্চলটির নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর—পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি, সীমান্তে পর্যাপ্ত সেনাও তৈরি রাখছে ভারত। এদিকে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে সপ্তম সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে যোগ দিচ্ছে ভারত।