মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় সচল করা হচ্ছে পুরাতন যাত্রীবাহী বগি। ঈদে ঘরমুখো অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে কারখানায় জোরেশোরে চলছে বগি মেরামতের কাজ। জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত মালামালের অভাব সত্ত্বেও এবার ৭৫ টি বগি সরবরাহের লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। এসব বগি দিয়ে পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী প্রতিটি ট্রেনে বগির সংখ্যা বৃদ্ধি ও ঈদ স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালানো হবে এসব বগি দিয়ে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সবকটি বগি সরবরাহ করতে কারখানা জুড়ে চলছে কর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যে ৪০ টি বগি রেলওয়ের পাকশী ও লালমনিরহাট ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রেলওয়ে কারখানা সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীবাহী ট্রেনে বগির সংখ্যা বাড়াতে পুরাতন ৭৫টি বগি মেরামত করার সিদ্ধান্ত নেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। গত জুলাই মাস থেকে শুরু হয় বগি মেরামতের কাজ। কারখানার ৪টি উপ-কারখানায় (সপ) চলছে বগি সচল করার কর্মব্যস্ততা। এর সঙ্গে কারখানার আরও ২৪টি উপ-কারখানা বগির যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম তৈরীর কাজ করছে। সব মিলিয়ে কারখানার ২৮টি উপ-কারখানার শ্রমিক, কারিগর ও প্রকৌশলীরা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। জনবল সংকটের কারণে বগি সরবরাহের লক্ষ্য পূরণ করতে দৈনিক কর্মঘন্টার অতিরিক্ত ১ ঘন্টা বেশী কাজ করছেন শ্রমিক-কারিগররা। মোট ৭৫ টি বগির মধ্যে ব্রডগেজ রেল পথের ৫৩টি এবং ২২টি মিটার গেজ রেল পথের বগি রয়েছে। এর মধ্যে ব্রড গ্রেজ ৩৪ টি এবং মিটার গেজ ১৩টি বগি সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। সূত্র মতে, সড়ক পথে অহরহ দূর্ঘটনা, যানজট মাত্রাতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ঘরমুখো মানুষ ট্রেনমুখী হয়ে উঠেছেন। ফলে ঈদ যাত্রায় ট্রেনমুখী অধিক যাত্রী বহন করতে অতিরিক্ত বগি মেরামত চলছে কারখানায়। এসব বগি রেলওয়ে বহরে যুক্ত হলে ঈদের আগে ও পরে ৬০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতের সুবিধা পাবেন।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ সপের ইনচার্জ প্রকৌশলী দিলশাদ করিম জানান, রেলওয়ে বহরে বগির সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগের পুরাতন বগি সংগ্রহ করে কারখানায় নতুন করে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য মজুদ মালামাল ও কারখানার মেশিনারী উপ-কারখানায় (সপ) তৈরী সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে সকাল-সন্ধা কাজ করছেন শ্রমিক-কারিগররা।
জানতে চাইলে, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্তাবধায়ক কুদরত-ই-খুদা জানান, ঈদ যাত্রায় রেলওয়েতে অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করতে কারখানায় অতিরিক্ত বগি মেরামত করা হচ্ছে। চলতি মাসে ১৬ আগষ্টের মধ্যে সবকটি বগি ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হবে। বগিগুলো দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করতে প্রতিটি ট্রেনে বগির সংখ্যা বাড়ানো হবে। কারখানায় জনবল সংকটের মধ্যেও এ কাজ ভালভাবে এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি। (ছবি আছে)
সৈয়দপুরে ট্রাফিক সপ্তাহ
৫ দিনে মামলা ৪৩৭টি
অভিযান চলাকালে উধাও
রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটর সাইকেল
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
সৈয়দপুরে ট্রাফিক সপ্তাহে যানবাহন ও চালকের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ৪৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ অভিযান রবিবার থেকে শুরু হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৫ দিনে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করে ট্রাফিক বিভাগ ওই পরিমাণ মামলা দায়ের করে। এদিকে ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হওয়ার পর অভিযান চলাকালে রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল উধাও হলেও সন্ধ্যার পর ফির দেখা মিলছে সে সবের। অভিযান চলাকালে সংশ্লিষ্ট সূত্র ও মামলার চিত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, দুর্ঘটনা থেকে বাঁচুন এ শ্লোগানকে সামনে রেখে সৈয়দপুরে শুরু হয় ট্রাফিক সপ্তাহ। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৪৩৭টি মামলা হয়েছে। গতকাল মামলা হয় ৪৫টি। এর আগে সপ্তাহের প্রথম দিন ৮৭টি, দ্বিতীয় দিন ৯৬টি, তৃতীয় দিন ১০৫টি ও চতুর্থ দিন ১০৪টি মামলা করা হয়। নীলফামারী জেলা ট্রাফিক বিভাগের শহর ও যানবাহন পরিদর্শক আবু নাহিদ পারভেজ চৌধুরী জানান, সড়কে চলা যানবাহন ও চালক যাতে অবৈধভাবে চলাচল করতে না পারে, সে জন্য এ অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলা অভিযানে পিকআপ, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করা হয়। এতে ৪৩৭টি যানবাহন ও চালকের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় মামলা করা হয়। ট্রাফিক সপ্তাহ শেষ হলেও নিয়মিত অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।
অভিযানের সফলতা দাবি করে ট্রাফিক বিভাগের একটি সূত্র জানায়, অভিযান চলাকালে যানবাহনগুলোর কাগজপত্র তৈরী করতে বিআরটিএ অফিসে দরখাস্তের হিড়িক পড়েছে। মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যাংকেও টাকা জমা দেয়া শুরু করেছে মোটরসাইকেল মালিকরা। বিআরটিএ নীলফামারী জেলা অফিসের একটি সূত্র জানায়, সারাদেশে অভিযান শুরুর কারণে যানবাহনগুলোর কাগজপত্র তৈরী করতে লোকজন আবেদন করছে। একইভাবে ব্যাংকেরও সূত্র জানায়, মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করার জন্য অসংখ্যজন আবেদন করে টাকা জমা দিচ্ছেন। প্রতিদিনই টাকা জমা দেয়ার চাপ বাড়ছে। এছাড়া ইন্স্যুরেন্স অফিসগুলোতেও গাড়ির ইন্স্যুরেন্স করার জন্য আবেদন জমা দিচ্ছেন অনেকেই।
এদিকে ট্রাফিক বিভাগের মামলার হিসেবে দেখা গেছে অভিযান চলাকালে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৩৭টি মামলার বিপরীতে সবচেয়ে কম মামলা হয়েছে রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে। অভিযান চলাকালে অন্যান্য যানবাহন আটক হলেও রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটর সাইকেলের দেখা মিলেছে কম। তবে অভিযান শেষ হলেই দেখা মিলে ওইসব মোটরসাইকেলের। ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে অভিযান চলাকালে সহযোগিতা করেছে সৈয়দপুর থানা পুলিশ।
অভিযানের প্রথম দিন উপস্থিত ছিলেন সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পার, থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজাহান পাশাসহ সঙ্গীয় অফিসার। অভিযান চলাকালে পথচারিসহ যানবাহনে চালকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চালানো হচ্ছে মাইক প্রচার। অভিযানে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ও যানজট পরিস্থিতিও অনেকটা উন্নতি হয়েছে। শহরের বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে এমন মন্তব্য জানা গেছে।
সৈয়দপুরে চাকুরীদাতা প্রতারক আটক
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
সৈয়দপুরে উত্তরা ইপিজেডে চাকুরী দেয়ার কথা বলে প্রতারক চক্রের হোতা শাহীন আলম ১১ জন দুস্থ নারী-পুরুষের এক লাখ ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় গত বুধবার ওই প্রতারককে থানায় আটক করা হলেও প্রতারিতরা ফেরত পায়নি কোন টাকা পয়সা। প্রতারক শাহীন আলমের বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার বাবরীঝাড়ের কিসামত চড়াইখোলা গ্রামে। তবে টাকা পরিশোধের আশ্বাসে প্রতারক শাহীন আলমকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও ভূক্তভোগীরা জানায়, উপজেলার কাশিরাম ইউনিয়নের পালপাড়ার ১১ জন দুঃস্থ নারী পুরুষকে ইপিজেডে বিভিন্ন পদে চাকুরী দেয়ার নাম করে ‘র’ আদ্যক্ষরের স্থানীয় এক দালালের সহায়তায় এক লাখ ৫০০ টাকা শাহীন আলম হাতিয়ে নেয়। টাকা দেয়ার দুই দিনের মধ্যে চাকুরী প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। কিন্তু কথা আর কাজে গরমিল দেখা দিলে ঘটনার শিকার নারী-পুরুষরা ওই প্রতারককে সুকৌশলে ডেকে এনে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
প্রতারণার শিকার রামায়ণ, তুফানি, ফেন্সি, লিপি ও সুমি অভিযোগে জানান, দুবেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করতে সরল বিশ্বাসে তার (প্রতারক) কথামত গ্রাম্য মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার নিয়ে দেয়া হয়। অথচ চাকুরীতো দূরের কথা টাকা ফেরত পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় ঋণের জালে আটকা পড়ে পথে বসা ছাড়া সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই।