খবর৭১: পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষের প্রাধান্যই বেশি। সেক্ষেত্রে নারী বরাবরের মতোই অবহেলিত, নির্যাতিত। পুরুষের সমাজে পুরুষ চাইলে তার শরীর যেকোনও নারীর সঙ্গে বিনিময় করতে পারে। এতে তার চরিত্রে খুব একটা কালিমা লাগেনা। কিন্তু সেটি যদি কোনও নারী করে, তবে তাকে হতে হয় পরিবারচ্যূত, স্বামীচ্যূত। এমনকি সমাজ তাকে সারা জীবনের মতো বাঁকা চোখেই দেখে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুখমণ্ডল, নাক, স্তনে পরিবর্তণ আনতে সার্জারির জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্ত তিউনিসিয়ার তরুণীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। তারা সতীত্ব পুনর্গঠনে স্বউদ্যোগে করাচ্ছেন কসমেটিক সার্জারি।
পুরুষের সন্দেহের মুখে নিজের সতীত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে এবার নিজেরাই উদ্যোগী হচ্ছে তিউনিসিয়ার তরুণীরা। বিয়ের আগে যদি কোনও পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হয় আর বিয়ের পর স্বামী যদি সেটি জেনে ফেলে তবে অনেকক্ষেত্রেই সেই নারীকে ডিভোর্সের শিকার হতে হয়।
ফলে বিষয়টি ভালোই ভাবাচ্ছে দেশটির তরুণীদের। এরই প্রতিকার হিসেবে বিয়ের আগে কারও সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক হলেও স্বামী যেন সেটি টের না পায় সেজন্য যৌনাঙ্গকে অটুট রাখার কৌশল হিসেবে সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছে তরুণীরা। সার্জারিগুলো হচ্ছে রাজধানী তিউনিসের ক্লিনিকগুলোতে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে। নিজেকে ভার্জিন বানানোর এই সার্জারিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪০০ ডলার।
অর্থাৎ সামান্য সার্জারির মাধ্যমে যৌনাঙ্গ এমন অবস্থায় আনা যাতে করে মনে হয় তার আগে কোনও যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি। এর কারণ হলো তিউনিসিয়ায় বিয়ের পর অনেক পুরুষ সন্দেহ করেন যে তার নবপরিণীতা স্ত্রী আগেই সতীত্ব হারিয়েছেন।
যৌনাঙ্গ পুনর্গঠন করতে আসা এমনই এই তরুণীর নাম ইয়াসমিন (ছদ্মনাম)। তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু অতীতে অন্যকারও সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখন হবু স্বামীর কাছ থেকে বিষয়টি আড়াল করতেই পরিবার ও হবু স্বামীকে না জানিয়ে গোপনে তিনি সার্জারি করাতে হাসপাতালে এসেছেন। তবে তার ভয়, সার্জারি করলেও স্বামীর কাছে কতদিন তার যৌন সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখেতে পারেন তা নিয়ে।
বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে ওই তরুণী বলেন, “এটা অনেকটা আত্মপ্রবঞ্চনার মতো এবং আমি আসলেই উদ্বিগ্ন যে কোন দিন হয়তো আমার স্বামীর সাথে আলাপচারিতার সময় ভুলবশত নিজের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেলতে পারি। বা আমার স্বামী হয়তো সন্দেহ করার জন্য কিছু ক্লু পেয়ে যাবেন।”
ইয়াসমিন আরও বলেন, “একজনের সাথে আমার প্রেম ছিলো এবং তখন আমি বুঝতেই পারিনি সমাজে এটা নিয়ে কেমন চাপ কাজ করে আর এর পরিণতিই বা কেমন হতে পারে। আর সে কারণেই এখন আমার ভয় লাগছে। আমি যদি এগুলো আমার হবু বরকে বলি তাহলে আমি নিশ্চিত সে বিয়ে বাতিল করে দেবে”।
নারী অধিকার সুরক্ষার জন্য উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে তিউনিসিয়া খুবই প্রশংসিত। এ সত্ত্বেও দেশটিতে ধর্ম ও প্রথাই অনেক কিছুর নিয়ন্ত্রক। এমনকি সেটি নারীর সতীত্বের ক্ষেত্রেও। সমাজের নিয়মটাই এমন দাঁড়িয়েছে যে বিয়ের আগে নারীকে যে কোনও মূল্যে সতীত্ব রক্ষা করতে হবে।
তবে তিউনিসিয়ার সমাজ প্রতারণায় পরিপূর্ণ এমন মন্তব্য করে সমাজবিজ্ঞানী সামিয়া ইলৌমির বলেন, “তিউনিসিয়ার সমাজ একটি মুক্ত সমাজ। কিন্তু আমরা আসলে প্রতারক হয়ে যাচ্ছি। এখানে যেমন কিছু সামাজিক রীতিনীতি আছে যেগুলো পালনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ আমরাই আবার দাবি করি যে এটি একটি আধুনিক সমাজ। আমরা ততটুকু আধুনিক হইনি যা প্রতিফলন নারী যৌনতা ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দেখা যায়।”
এদিকে ২৮ বছর বয়সী ইয়াসমিনের জন্ম একটি উদার পরিবারে। বহু বছর তার পরিবারের বাস তিউনিসিয়ার বাইরে। বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় এখন তার ভয়, হবু বর যদি তার যৌন অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারে তাহলে হয়তো বিয়েই ভেঙে দেবেন।
তিউনিসিয়ার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিশেম। আগামী বছরেই বিয়ে করবেন তিনি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- তার হবু স্ত্রীর সতীত্ব আছে কি নেই। কিংবা তার কাছে বিষয়টি মূল্য কতটুকু?
উত্তরে হিশেম বলেন, “বিয়ের পর আমি যদি বুঝতে পারে আমার স্ত্রীর যৌনাঙ্গ অক্ষত নয়, অর্থাৎ সে ভার্জিন নয় তবে আমি তাকে কোনও দিনও বিশ্বাস করতে পারবো না। সতীত্ব পুনর্গঠনের পক্ষে নই আমি। এটি শুধুই কৃত্রিমতা। স্বামীদের সঙ্গে বড় প্রতারণাও।” খবর বিবিসি।
খবর৭১/এস: