খবর৭১ঃ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন- এই তিন মাসে নতুন করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। জুন শেষে অবলোপন বাদে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকায়। আর অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
আগের বছরের জুন পর্যন্ত অবলোপন বাদে খেলাপি ঋণ ছিল ৯০ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক জানুয়ারি থেকে মার্চ- এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।
এ সময়ে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লেও সরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। এতে শতকরা হিসাবে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার কমেছে। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা জুনে হয়েছে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবছর জুন ও ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমে যায়। শতকরা হারের পাশাপাশি পরিমাণগত হিসাবেও কমে খেলাপি ঋণ; কিন্তু এবার জুন প্রান্তিকে শতকরা হিসাবে খেলাপি ঋণ কমলেও পরিমাণগত হিসাবে বেড়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, এত কারচুপি করার পরও খেলাপি ঋণ কমেনি। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুনঃতফসিলের নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। তারপরও যখন খেলাপি ঋণ কমেনি, এতে বোঝা যায়, সুযোগ-সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণ কমানো যাবে না। বরং এ ধরনের সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে আশকারা পেয়ে খেলাপিরা আরও অপতিরোধ্য হয়ে উঠবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এর মানে খেলাপি ঋণের কোনো উন্নতি হয়নি। কারণ খেলাপি ঋল আদায় করার ব্যাপারে যে সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত, সেটা আসলে হচ্ছে না। উল্টো ঋণখেলাপিদের ছাড় দিতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ঋণ অবলোপনের সময়সীমা ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৩ বছর করা হয়েছে। ঋণ শ্রেণীকরণের সময়সীমায়ও ছাড় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ পুনঃতফসিল নীতিমালা করা হয়েছে। আসলে এসব সুবিধা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
গত ৪ আগস্ট বেসরকারি ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন- জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমে আসবে। কিন্তু জুন প্রান্তিকে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার- দুই বেড়েছে। গত মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। জুন শেষে এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা বা ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, গত মার্চ শেষে যা ছিল ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। জুন শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমে হয়েছে ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ সময়ে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে তাদের খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন, নতুন করে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এ জন্য তিনি ঋণখেলাপিদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা ও ছাড়ের পথ তৈরি করেন। তারপরও জানুয়ারি থেকে মার্চ- এই তিন মাসে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যায় খেলাপি ঋণ। গত মার্চ শেষে প্রথমবার অবলোপন বাদে খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত %ELS