নড়াইলের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আবর্জনার ভাগাড় স্তুপে পরিনত!

0
347

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। নামেই বাস টার্মিনাল হলেও নির্মানের ১৩ বছর পরেও এই টার্মিনালটি বাস ও যাত্রী ওঠানামায় ব্যবহার হয় না। প্রথম কয়েক বছর নিয়মিত যাত্রী ওঠানামা সহ টিকিট কাউন্টারের কাজ চললেও গত ৭/৮ বছর এই টার্মিনাল পরিবহন সংশ্লিষ্ট কিম্বা যাত্রীদের সেবায় কোন কাজেই আসছে না। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় রিপোটে, টার্মিনাল ব্যবহার না হওয়ায় সম্প্রতি ক্লীন নড়াইল কর্মসূচীর আবর্জনার স্তুপে পরিনত হয়েছে জেলার কেন্দ্রীয় এই টার্মিনালটি।বাস টার্মিনালে গাড়ি না ঢোকায় শহরের মধ্যেই গড়ে উঠেছে কয়েকটি অস্থায়ী টার্মিনাল। যত্রতত্র গড়ে উঠেছে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় যেমন বেড়েছে যানযট,তেমনি শহরের মধ্য দিয়ে গাড়ি চলাচল করায় সারাক্ষনই দূর্ঘটনার কবলে পড়ে সাধারন মানুষ। টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ায় এটি দিনে দিনে পৌরসভার আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। যশোর থেকে নড়াইল শহরে ঢোকার পরই চোখে পড়বে আবর্জনার স্তুপের মধ্যে নড়াইলের বাস টার্মিনাল। নানা রুটে চলাচলের একটি বাসও ঢোকেনা এখানে। প্রায় পরিত্যক্ত এই টার্মিনাল ব্যবহার হয় গাড়ির গ্যারেজ আর মেরামতের কাজে। নড়াইল শহরের ভিতরে অবস্থিত পুরাতন বাস টার্মিনালটি বাতিল করে ২০০৪ সালে পৌরসভার প্রান্তে গড়ে ওঠে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। লজিইডির অর্থায়নে আধুনিক সব সুবিধা নিয়ে আড়াই একর জমির উপর প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মান করা হয় দ্বিতল ভবনের নতুন বাস টার্মিনাল। এখানে যাত্রীদের বিশ্রামগার,শৌচাগার সহ মালিক-শ্রমিক সমিতির আফিস,রয়েছে নানামুখী কয়েকটি টিকিট কাউন্টার। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও পরিপূর্নভাবে টার্মিনালটি ব্যবহার হয়নি কখনো। নানা অযুহাতে এই টার্মিনাল ব্যবহার না করে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী বাস টার্মিনাল ও টিকিট কাউন্টার। যত্রতত্র রাস্তার পাশে গাড়ি দাড় করিয়ে রাখার ফলে যানজট যেমন বাড়ছে তেমনি ভারী যানবাহন চলাচল করায় প্রতিনিয়তই ঘটে দূর্ঘটনা। সম্প্রতি গত এক বছরে নড়াইল পুরাতন ফেরীঘাট এলাকায় চিত্রা নদীর উপর শেখ রাসেলসেতু নির্মিত হওয়ায় জেলা শহরের মূল সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে কিন্তু টার্মিনাল ব্যবহার শুরু হয়নি। ঢাকাগামী কয়েকটি পরিবহন,মাওয়াগামী স্থানীয় পরিবহন সহ বিভিন্ন আ লিক রুটের সব বাস এই পথ দিয়ে চলাচল করে। এই কারনে আরো নতুন কয়েকটি অস্থায়ী বাসস্টপেজ ও টিকিট কাউন্টার তৈরী হয়েছে। ফলে নড়াইল চৌরাস্তা,থানার মোড়,পুরাতন টার্মিনাল ,হাসপাতাল গেট,রূপগঞ্জ চৌরাস্তা,মুচিপোল এলাকায় যাত্রী ওঠানামা করে।এত একদিকে যেমন আবাসিক এলাকার রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়ছে তেমনি স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুকি ও বাড়ছে। জেলা শহরের একমাত্র এই রাস্তায় চলাচল করে প্রায় ১৮টি স্কুল ও কলেজের ছেলে মেয়েরা। আবাসিক এলাকার অন্ততঃ ২২ টি ছোট-বড় রাস্তা মিলেছে এই শড়কে।নড়াইল শহরের ব্যবসায়ী বশির আহম্মেদ শম্পি নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, শহরের ভিতরে চলাচলকারী বাসগুলো যদি বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে তাহলে শহরে যেখানে সেখানে বাস দাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। এতে করে দূর্ঘটনা এবং জানজট দুই-ই কমতো।জাসদনেতা শাহ আলম নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, আমাদের জেলা শহরের একটি মাত্র রাস্তা এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত ছেলে মেয়েরা স্কুলে যায়। এই রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কি হচ্ছে,দূর্ঘটনা লেগেই আছে। এই রাস্তায় এখন আমাদের ভয় লাগে কখন বড় দূর্ঘটনা ঘটে যায়। একটি বড় দূর্ঘটনা ঘটলে তবে প্রশাসনের টনক নড়বে।স্থানীয়দের ধারনা, বাস টার্মিনালটি শহরের একপ্রান্তে হওয়ায় এখানে আ লিক রুটের বাসগুলো সময় নিয়ন্ত্রন করলে দূর্ঘটনার ঝুঁকি কম হবে। কিন্তু হাতিরবাগান এলাকায় কাউন্টারে সময় নিয়ন্ত্র করতে গিয়ে বাসগুলো শহরের মধ্যে দ্রুতগতিতে ঢোকার কারনে বেশিরভাগ সময় দূর্ঘটনায় কবলিত হয়। নড়াইল জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ খান নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, সারাদেশে বাস টার্মিনাল বাস-মিনিবাস চলাচলে ব্যবহার হলেও এখানকার মালিকদের গাফিলতির কারনে এই পরিপূর্ন টার্মিনালটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে দূরের যাত্রীরা বিশ্রাম থেকে বি ত হচ্ছে,সময় নিয়ন্ত্রন শহরের মধ্যে হওয়ায় দূর্ঘটনা বাড়ছে।নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কাজী জহিরুল হক নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, নড়াইল বাস টার্মিনাল এর ভিতরে রাস্তা ব্যবহার উপযোগী নয়,নানা ধরনের দোকানপাট গড়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এই টার্মিনালের সাথে কোন বাইপাস সড়ক নেই ফলে সবগুলো রূট ব্যবহার করা যাচ্ছে না।বাস টার্মিনাল ব্যবহার না করে সড়কে যত্রতত্র গাড়িতে যাত্রী ওঠানামায় ট্রাফিক জ্যাম এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনে সমস্যার কথা স্বীকার করলেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আমনউল্লাহ।নড়াইল পৌরসভার মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর বিশ্বাস নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, নড়াইল পৌরসভা থেকে আমরা বার বার নানা সভায় টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য বলেছি, এখানে আমাদের অনেকগুলো স্কুল, ইতিমধ্যে ছেলে-মেয়েরা দূর্ঘটনারও স্বীকার হয়েছেন। আমরা চাই জেলা প্রশাসক মহোদয় বাসমালিক সহ সব কর্তৃপক্ষেন সাথে সমন্বয় করে বাস টার্মিনাল ব্যবহারের উদ্যোগ নিক।নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, বাসটার্মিনাল ব্যবহার না হওয়ায় অনেক ধরনের সমস্যার কথা আমরা জানতে পেরেছি।মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের সাথে একাধিকবাদ আলোচনা হয়েছে। আবর্জনাগুলো সরিয়ে বিকল্প জায়গায় নিয়ে আশাকরি শীঘ্রই টার্মিনাল ব্যবহার করা যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here