খবর৭১ঃ ছাত্রলীগের হাতুড়ি পেটায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলামের ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। তিনচার জন না ধরলে প্লাস্টার করা পা নিয়ে তিনি নড়াচড়া করতে পারেন না। মাথায় দিতে হয়েছে নয়টি সেলাই। সেখানে সারাক্ষণ অসহ্য ব্যথা। পায়ের ভাঙা হাড় জোড়া লাগতে সময় লাগবে কমপক্ষে তিন মাস।
একদিন আগেও চিকিৎসক বলেছিলেন কমপক্ষে ১৫ দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি বাড়ি যেতে পারবেন। গুরুতর অসুস্থ সেই তরিকুলকে ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) অর্থোপেডিক বিভাগ। তরিকুলের এখন ঠাঁই হয়েছে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে!
গত সোমবার বিকেলে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে পতাকা মিছিল বের করলে রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তখনই মাটিতে ফেলে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় তরিকুল ইসলামকে। এই পিটুনির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, মাটিতে ফেলে তাঁকে চারপাশ থেকে ঘিরে লাঠি দিয়ে দিয়ে পেটাচ্ছে কয়েকজন। এর মধ্যে হলুদ গেঞ্জি পরা একটি ছেলে এসে হাতুড়ি দিয়ে তরিকুলকে মারছে। পরে জানা যায় ওই হাতুড়ির আঘাতে তরিকুলের ডান পায়ের দুটি হাড়ই ভেঙে গেছে।
হলুদ গেঞ্জি পরা যে তরিকুলকে হাতুড়ি পেটা করেছে, তাঁর পরিচয়ও জানা গেছে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
আহত হওয়ার পর গত সোমবারই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি করা হয় তরিকুলকে। এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, তরিকুলের ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। তাই ওই পা প্লাস্টার করে দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
গুরুতর রোগীর হাতে দেওয়া হলো ছাড়পত্র
হাসপাতালে তরিকুলের সঙ্গে থাকা তার স্বজন ও সহপাঠীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর একটার দিকে হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে তরিকুলের ছাড়পত্র তুলে দেওয়া হয় সেখানে তার পাহারায় থাকা পুলিশকে। এর আগে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তরিকুলের পাহারায় রাখা হয় পুলিশ। ফলে পুলিশের হাতে ছাড়পত্র দেওয়ায় তরিকুলের স্বজন ও সহপাঠীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছাড়পত্র হাতে পেয়ে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর বেলা সাড়ে ৩টার পর পুলিশ তরিকুলের হাসপাতাল ত্যাগের ছাড়পত্র তাঁর স্বজনদের হাতে তুলে দেয়। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানায়, তরিকুলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। ফলে তরিকুলকে তার স্বজনরা যেখানে খুশি নিয়ে যেতে পারবে। এর পরই গুরুতর অসুস্থ তরিকুলকে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার বেসরকারি রয়েল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তরিকুলের সাথে সার্বক্ষণিক থাকা তার সহপাঠী মতিউর রহমান জানান, রয়েল হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ আহমেদ তরিকুলের চিকিৎসা তদারকি করছেন। সাঈদ আহমেদ আগামী শনিবার নতুন করে তরিকুলের এক্স-রে করার পরামর্শ দিয়ে জানান, সেদিনের এক্স-রে রিপোর্ট দেখে তিনি বলতে পারবেন তরিকুলের পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে কি না। তবে সাঈদ তরিকুলের স্বজনদের বলেছেন, ৮০ ভাগ সম্ভাবনা আছে তরিকুলের অস্ত্রোপচার করতেই হবে। সাঈদ আহমেদ বলেছেন, ‘তরিকুলের পায়ের ভাঙা হাড় জোড়া লাগতে কমপক্ষে তিন মাস লাগবে। গায়ে এবং মাথায় মারের ফলে যে ব্যথা রয়েছে তা সারতে দুইতিন সপ্তাহ লাগবে। ব্যথার জন্য তরিকুলকে ব্যথানাশক ইনজেকশন, এন্টিবায়োটিক ও স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যথার যন্ত্রণায় তরিকুল ছটফট করায় তাকে মাঝেমধ্যে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে।’