শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, “বিজিবি” প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমারের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে সমন্বিতভাবে সীমান্তের চোরাচালানসহ সব ধরণের অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছে। বিএসএফ’র সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় সমন্বয় করে বেনাপোলে ক্রাইম জোন স্থাপন করেছি। ফলে এ অ লের অপরাধ দমন সম্ভব হয়েছে। সোমবার দুপুরে বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে ‘বর্ডার সার্ভেইল্যান্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে এক আলাপচারিতায় এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে তিনি বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় নোমান্সল্যান্ড এলাকায় বিএসএফ’র ৬৪ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল রাভি ভূষন তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
উক্ত সময়ে মহাপরিচালকের সাথে ছিলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তৌহিদুল ইসলাম, ৪৯ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আরিফুল হক, ২১ বিজিবির সিও তারিকুল হাকিম, ও আরআইবির সিও লে. কর্নেল খবির উদ্দিন।
উল্লেখ্য, ‘বর্ডার সার্ভেইল্যান্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ৩৯৯ কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্পর্শকাতর ওই এলাকাজুড়ে বিজিবির নজরদারি নিশ্চিত করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ‘বর্ডার সার্ভেইল্যান্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে থার্মাল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, রাডার, সেন্সরযুক্ত বিভিন্ন যন্ত্র ও সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। বর্ডার সার্ভেইল্যান্স এর পাশাপাশি প্রয়োজনানুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুর্গম সীমান্তে ‘রেসপন্স টিম’ পৌঁছানোর লক্ষ্যে যেকোন ধরণের স্থল সীমান্তে চলাচল উপযোগী ‘অল টেরেইন ভেহিকেল’ এবং দুর্গম জল/নৌ সীমান্তের জন্য হাই স্পীড বোড সরবরাহ করা হবে।
‘বর্ডার সার্ভেইল্যান্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’র মাধ্যমে নেটওয়ার্কভুক্ত সীমান্তে সংশিষ্ট ‘কমান্ড’ পর্যায় থেকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা সম্ভব হবে। সংশিষ্ট ইউনিট ছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবে সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম’র মাধ্যমে সীমান্তে নজরদারির লক্ষ্যে বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানায় সর্বাধুনিক কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় মাদক, অস্ত্রসহ সবধরণের চোরাচালান ও সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক হবে বলে বিজিবি জানান।
এছাড়া চিহ্নিত স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯৯ কিলোমিটার সীমান্ত আগামী ৩ বছরের মধ্যে সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম’র আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে যশোরের পুটখালীর ৭ কিলোমিটার স্পর্শকাতর সীমান্তে ‘বর্ডার সার্ভেইল্যান্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সীমান্তের ১০ কিলোমিটার এলাকায় এই সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী বছর নাগাদ কক্সবাজার জেলার অধিকাংশ সীমান্ত এলাকা, নওগাঁর হাপানিয়া সীমান্ত, দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী চরা লে ‘বর্ডার সার্ভেইল্যান্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
এছাড়া সীমান্তের চেকপোস্টগুলোতে নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বেনাপোল ও হিলি চেকপোস্ট বিজিবি’র সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সীমান্তের সকল চেকপোস্ট একইভাবে সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকায় ‘সার্ভেইল্যান্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপন সম্পন্ন হলে সীমান্ত অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন বিজিবির মহাপরিচালক সাফিনুল ইসলাম।
খবর ৭১/ইঃ