খবর ৭১ঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদের মৃত্যু হত্যায় নয়, হয়েছে ট্রেনে কাটা পড়ে-ধারণা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদের। পুলিশের ধারণাও একই।
অবশ্য সুমনের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। ‘ভালো না হয়ে গেলে পরিণতি ভালো হবে না-বলছিল হুমকিদাতারা। আর এ কারণে এই মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যা বলেছেন তার একজন স্বজন। তার ধারণা, খুন করে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে মনে হয় এটি একটি দুর্ঘটনা।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক অবশ্য কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। বলেছেন, প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারা ধারণা করছেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য আরও কিছু পরীক্ষার দরকার আছে। সে জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সুমন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় একাত্তরের খুনি বাহিনী আলবদরের দুই নেতা চৌধুরী মুইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক একাত্তরের দুই খুনির ফাঁসির আদেশ হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আর বিচার চলাকালে নানা সময় সাক্ষীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি সামনে এসেছে। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে এক সাক্ষীকে পিরোজপুরে ঘরে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আর এ কারণে সেলিনা পারভীনের ছেলেন গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের খবরটি হত্যা কি না, সে বিষয়ে নানা কথা বলাবলি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার সময়ে রাজধানীর শাহজাহানপুরের বাগানবাড়ির রেললাইনের উপর থেকে সুমনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তা নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, সুমনের মৃত্যু ট্রেনে কাটা পড়ে হতে পারে।
এমন ধারণা করার কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘তার (সুমন) মুখম-লে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার ক্ষতের চিহ্ন দেখে মনে হয় ট্রেনে কাটা পড়েই তার মৃত্যু হয়েছে।’
‘তবুও তার রক্ত ও ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পেলেই তার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
পুলিশের বক্তব্যও একই ধরনের। ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক বলেন, ‘সুমন জাহিদের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।’
মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। রেললাইন ঘেঁষেই সুমন জাহিদের লাশ পড়ে ছিল। আমরা ধারণা করছি, ট্রেনের চাকা তার গলার ওপর দিয়ে গেছে। তবে কোন ট্রেন তা আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।’
তবে সুমনের পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিতভাবে হত্যা। নিহতের শ্যালক কাজী সারোয়ার মর্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই হুমকি আসছিল। মুঠেফোনে তাকে বলা হয়েছে আসছিল ভালো হয়ে যান। আপনি অনেক বেড়ে গেছেন।’
‘দুই বছর ধরে তিনি অনেকবার হুমকি পেয়েছেন। তাই আমরা ধারণা করছি, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
সুমন জাহিদ ফারমার্স ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার সেকেন্ড অফিসার ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী।
সুমন জাহিদের দুটি সন্তান রয়েছে। তাদের মধ্যে বড় সন্তান স্মরণ টিঅ্যান্ডটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আরেক ছেলে সুমন্দ্র আইডিয়াল স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
খবর ৭১/ইঃ