খবর৭১ : কক্সবাজার-টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত তিনবারের নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরাম হত্যার কথোপকথনের অডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছে নিহতের স্ত্রী। তার এ মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না পরিবার-পরিজন, রাজনৈতিক সহকর্মী, বন্ধুবান্ধবসহ সর্বস্তরের মানুষ।
পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের দাবি একরামুলকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে।
এ ঘটনার ৬ দিনের মাথায় নিহত একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম ও দুই কন্যা তাহিয়াত এবং নাহিয়ান কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকাণ্ডের কথোপকথনের অডিও ক্লিপ সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করেন।
এই অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে একরাম হত্যা নিয়ে আরও বেশি প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে তার রাজনৈতিক সহকর্মী, পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবসহ সর্বস্তরের মানুষ।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে একরামকে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ তুলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছেন স্ত্রী আয়েশা বেগম। পাশাপাশি স্বামীর হত্যার সুবিচার প্রার্থনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছেও।
আয়েশা বেগম যুগান্তরকে বলেন, আমার স্বামী একরামুল হক দীর্ঘ ১৩ বছর টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন এবং তিনবার নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর। আর ব্যক্তিজীবনে সে কেমন মানুষ ছিলেন সবাই জানে। ইয়াবা ব্যবসা দূরের কথা জীবনে কখনও কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়ায়নি। একরাম সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। যার চারটি অডিও রেকর্ড ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া হয়েছে।
তবে স্থানীয়ভাবে র্যাবের একটি সূত্র বন্দুকযুদ্ধে নিহত একরামুল হকের স্ত্রীর অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিলেও অডিও টেপটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানালেন র্যাব সদর দফতর।
শুক্রবার র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে অডিও রেকর্ডের কথা বলা হচ্ছে আমরা তা আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখছি।
এদিকে একরামুল হকের সঙ্গে র্যাবের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে না বলে জানালেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল বাশার।
এই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাবি র্যাবের এই অভিযানে ভুল ছিল। না হয় একরামের মতো রাজনৈতিক কর্মী কখনও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হতো না। অভাব-অনটন নিয়ে যার জীবন কাটে। সে কখনও মরণনেশা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না।
উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বলেছেন, নিহত একরাম হত্যার পেছনে ভুল তথ্য আছে বলে মনে করছি। কারণ যে একরাম ইয়াবার গডফাদার তাকে প্রশাসন আটক করতে পারেনি। আর নিহত একরাম ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল এমন কোনো তথ্য বা কথা আমি কখনো শুনি নাই। এই হত্যা খুবই দুঃখজনক।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ২৬ মে রাতে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত কাউন্সিলর ও সাবেক যুবলীগ সভাপতি একরামের নামে থানায় কোনো প্রকার মাদক কিংবা জিআর মামলা নেই। তবে ঘটনার পর র্যাব বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করে। হত্যা, অস্ত্র ও ইয়াবা।
এদিকে একরাম হত্যার পর থেকে প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিহত একরামের সহকর্মী, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, বন্ধুবান্ধবসহ সর্বস্তরের লোকজন প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেছে। যে কারণে বর্তমান সময়ে ইয়াবাসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে একরামের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
উল্লেখ্য, সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আয়েশা বলেন, ‘২৬ মে রাতে একটি গোয়েন্দা সংস্থার মেজর পরিচয় দিয়ে একরামকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আমার স্বামী মোবাইলে আমার মেয়ে ও আমার সঙ্গে কথা বলেন। তখন তার কণ্ঠে আতঙ্ক ছিল। এরপর থেকে আমার মোবাইলটি সারাক্ষণ খোলা ছিল। এতে রেকর্ড হচ্ছিল। ওই দিন রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিৎকার ও গুলির শব্দ শুনেই আমি ও আমার পরিবার আঁতকে উঠি। তখনই বুঝতে পারি আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে গুলি করে হত্যা করেছে র্যাব।
খবর৭১/এস: