বাজেটে দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মূলধন সহায়তা কমছে ৫০০ কোটি

0
370

খবর ৭১: আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে মূলধন সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছর বাজেটে দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে মূলধন সহায়তা বাবদ সরকারের পক্ষ থেকে বিপুল অর্থসহায়তা দেয়া হয়। চলতি বছর এ খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আগামী অর্থবছরে এই অর্থের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, বাজেটে ‘মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’- শীর্ষক একটি খাত রয়েছে। এ খাত থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে প্রতি বছর আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছরেও এ খাতে একই পরিমাণ বরাদ্দ ছিল। কিন্তু আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এখানে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির মূল কারণ হচ্ছে খেলাপি ঋণ। আশা করা হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপর হবে এবং এতে করে তাদের মূলধন ঘাটতি কমে যাবে। মূলধন ঘাটতি কমে গেলে তাদের আর্থিক সহায়তারও কম প্রয়োজন হবে। এসব কথা বিবেচনায় এনে আগামী অর্থবছরে মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ খাতে ১৫ শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮ শ’ কোটি টাকা।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, ৬৩৭ কোটি টাকা এবং ১৬১ কোটি টাকা। একই সময়ে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত ৪ অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংক বেসিককে। এই ব্যাংককে মোট দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।

এ বছরের শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ চায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম এই ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটি ‘হলমার্ক’ কেলেঙ্কারির কারণে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অন্য দিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটিও ‘অ্যাননটেক্স’ নামে একটি অখ্যাত গ্রুপকে নিয়মনীতি না মেনে ৫ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

দুর্নীতির কারণে বহুল আলোচিত ব্যাংক বেসিকও মূলধন পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটি ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়েছে। মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য রূপালী ব্যাংকের প্রয়োজন ১২ শ’ ৫০ কোটি টাকা। অন্য দিকে, বিশেষায়িত ব্যাংক বলে বিবেচিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এ খাতে চেয়েছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা এবং ৮০০ কোটি টাকা।

গত ১৫ মে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আসন্ন বাজেটে খেলাপি ঋণ ও তারল্য সঙ্কটে নিমজ্জিত সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য পুনঃতফসিলীকরণ ও পুনঃমূলধনীকরণ সুবিধা রাখলে তা ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিত হবে।’
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here