শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ
চুরির অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে জনসম্মুখে গাছে বেঁধে পিতা-পুত্রকে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনার ৪ দিন পরে পালং মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর ৩ নির্যাতনকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ২ জনকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরন করেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপর ১ জনের বিষয় তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সন্তষপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্য পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফের বিরুদ্ধে বিষয়টির বিচার না করে গড়িমশির অভিযোগ করেছে মামলার বাদী। অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ বলছেন, তিনি নির্যাতিতদের থানায় মামলা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
মামলার এজাহার ও পালং মডেল থানা সুত্রে জানাগেছে, গত শবে বরাতের রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার উত্তর চন্দ্রপুর গ্রামের হালিম বেপারীর বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই চুরির ঘটনায় ৯ মে সকালে পার্শ্ববর্তী এলাকার ভ্যান চালক খোকন মোল্যার ছেলে ও ১৯ নং বাহের চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শামীমকে (১০) সন্দেহ করে ধরে নিয়ে কোমরে লোহার শেকল দিয়ে সামন থেকে গাছের সঙ্গে বেঁধে এবং ২ হাত পিছন দিকে অপর গাছের সাথে বেধে বেদম মারপিট কওে একই এলাকার হালিম বেপারী ও তার লোকজন।
একই দিন সকাল সাড়ে ৯টার সময় শামিমের বাবা খোকন মোল্যা ভ্যান চালিয়ে চন্দ্রপুর বাজারে যাওয়ার সময় তাকেও ধরে নিয়ে বাবা ও ছেলেকে একই গাছের সাথে একই শিকলে বেঁধে বেদম মারপিট করে বাবাকে বিকাল ৩টায় ছেড়ে দেয়া হয়। দিন ভর শিশু শামিমকে নির্মম নির্যাতন করার পর খবর পেয়ে সন্তষপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্ধ্যা ৭টায় শামিকে উদ্ধার করে। এর পর বাবা-ছেলে অসুস্থ হয়ে পরলে পরদিন (১ মে) সকালে তাদের দুইজনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে শিশু শামিম ও তার পিতা খোকন মোল্যা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ঘটনার গত ৪ দিন পর নির্যাতিত শিশু শামিমের মা ফাহিমা বেগম বাদী হয়ে হালিম বেপারীসহ ৫ জনকে আসামী করে সোমমবার রাতে পালং মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। পুলিশ সোমবার রাতেই করম আলী বেপারী, শাহেদ বেপারী ও সুমন বেপারীকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে সুমন বেপারীকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপর ২জনকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সন্তোসপুর পুলিশ ফাড়ির পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাদেরকে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ্আদালতে প্রেরণ করেছেন। আদালতের বিচারক আসামীদের জেল হাজতে প্রেরন করে।
মামলার বাদী ফাহিমা বেগম বলেন, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দিয়ে আমরা কোন বিচার পাইনি। ফাড়ির পুলিশ বিচার না করে বিষয়টি নিয়ে গড়িমশি করেছে।
পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ বলেন, শিশু শামিমকে উদ্ধারের পর এ বিষয়ে নির্যাতিত পরিবারের লোকজনকে থানায় মামলা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। স্থানীয় দুই পক্ষের টানা হেচরায় মামলা করতে না পেরে তারা মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। অভিযোগটি সঠিক নয়।
পালং মডেল থানার ওসি তদন্ত মুাহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনাটি গত ৯ তারিখের হলেও স্থানীয় লোকজন মিমাংসা করার চেস্টা করায় আমরা জানতে পারিনি। সোমবার শিশু শামিমের নির্যাতনের বিষয়টি জানার পর আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করি। এ ঘটনায় শামিমের মা বাদী হয়ে সোমবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেছে। এ পর্যন্ত আমরা ৩ জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছি। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে। যে ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এদের মধ্যে ২জনকে ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।