আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট ; লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভুমিহীন পরিবারের ছেলে ৬ বছরের রবিউলের পেটে ৫ কেজি ওজনের টিউমার। এটি অপারেশনে লাখ টাকার খুঁজে বিত্তবানদের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুড়ছেন দিনমজুর বাবা আবু তালেব। শিশু রবিউল ইসলাম উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের দিনমজুর ভুমিহীন আবু তালেব ওবেদা বেগম দম্পত্তির ছেলে। প্রতিবেশী ও রবিউলের পরিবার জানান, জন্মের পর থেকে দুর্বল শরীরের রবিউল ইসলাম স্বাভাবিক চলা চলের অক্ষম ছিল। জন্মের পরের বছর বেশী দুর্বল হলে স্থানীয় চিকিৎসা শেষে নেয়া হয় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তাকে থ্যালাসেমিয়া রোগী হিসেবে সনাক্ত করেন। এরপর থেকে প্রতি মাসে এক ব্যাগ এ পজেটিভ রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে রবিউলকে। ছেলের চিকিৎসায় নিজের বসত বাড়ির জমি বিক্রি করে আতœীয় প্রায়ত স্কুল শিক্ষক আব্দুল হামিদের এক টুকরো জমিতে কোন রকম বসবাস করছেন তারা। ছেলেকে বাঁচাতে দিনমজুর তালেব ওবেদা দম্পত্তি রবিউলকে নিয়ে ছুটে যান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এ কে এম কামরুজ্জামানের কাছে। সেখানে টানা তিন বছর ধরে চিকিৎসা নিয়েও অবস্থার কোন পরিবর্তন পাননি তারা। এরই মাঝে গত বছর হঠাৎ রবিউলের পেটে টিউমার সদৃশ্য বস্তু দেখে পুনরায় চিকিৎসকের দাড়স্থ হয় তার পরিবার। থ্যালাসেমিয়ার পাশাপাশি চলে টিউমারের চিকিৎসা। রবিউলের সাথে বড় হতে থাকে তার টিউমারটি। পেটের প্রায় ৯০ শতাংশ স্থান দখল করেছে টিউমারটি।
শনিবার (১২মে) পুনরায় রবিউলকে তার চিকিৎসক ডা. এ কে এম কামরুজ্জামানের কাছে নেয়া হলে তাকে রেফার করেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. বাবুল কুমার সাহার কাছে। তিনি নতুন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান, রবিউলের পেটের টিউমারটি ওজন হয়েছে ৪ দশমিক ৬৫ কিলোগ্রাম। যা প্রতিমুহুর্তে বড় হচ্ছে। একে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অস্ত্রপাচার করতে হবে। নতুবা ফলাফল খুবই ভয়াবহ হবে। এ অস্ত্রপাচারে প্রয়োজন হবে প্রায় লাখ টাকা। চিকিৎসকের এ কথায় নির্বাক ভুমিহীন দম্পত্তির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। নিরুপায় হয় আদরের ধন ছেলে রবিউলকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুড়ছেন তালেব ওবেদা দম্পত্তি। এর আগেও একই রোগে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় ৬ মাস ও সাড়ে ৩ বছর বয়সী দুই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় দুই ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা এ দম্পত্তি রবিউলকে পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আদরের ধন রবিউলও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। জিবনের সমস্থ পরিশ্রম সন্তানদের চিকিৎসায় ব্যায় করে এখন রবিউলের অস্ত্রপাচারের টাকার জন্য ভিক্ষার হাত বাড়িয়েছেন রবিউলের বাবা মা।
রবিউলের মা ওবেদা বেগম জানান, স্বামীর দিনমজুরী আয় রবিউলের চিকিৎসায় শেষ। অর্থের প্রয়োজনে বাড়তি আয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজে যেতে চাইলেও রবিউলকে একা রেখে যাওয়া অসম্ভব। ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য কামনা করেন তিনি।
রবিউলের বাবা আবু তালেব জানান, চিকিৎসক জানিয়েছেন তাদের স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ একই হওয়ায় তাদের সন্তানরা থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু বাঁচতে গেলে সন্তান প্রয়োজন, তাই রবিউলেই তাদের একমাত্র ভরসা। সেও মৃত্যুর প্রহর গুনছে। ছেলেকে বাঁচাতে তিনি সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। তাকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা বিক্যাশ ০১৭২৩৭২৩৮৬২।
রবিউল ইসলামের প্রতিবেশী মহিষখোচা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আনিচার রহমান জানান, আগের দুই ছেলের চিকিৎসায় সব কিছু বিকিয়ে দিয়ে পথে বসা তালেব নতুন করে রবিউলকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিল। সেও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। শিশু রবিউলকে বাঁচাতে তিনিও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
খবর৭১/এস: