খবর ৭১ঃ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়েছে এখানে। বহু ইতিহাস। বেশিরভাগই গৌরবের। কলঙ্ক যে একেবারে নেই তা নয়। জ্ঞানে-গরিমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো দুনিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উপরের দিকে ছিল না। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্রের জন্ম ইতিহাসে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এমন নজির আর কোথাও নেই।
বুধবার। বেলা ১১টা। শাহবাগ পৌঁছে দেখা গেল অল্প কিছু পুলিশ। পুলিশের দমন-পীড়নের অল্প কিছু বাহনও দেখা গেল। শাহবাগ থানা পেরুতেই দেখা মেলে বিরল এক দৃশ্যের। একটি মিছিল। শুরুতেই কেবল ছাত্রী। ধারণা করেছিলাম মিছিলটি বোধ হয় শুধু নারী শিক্ষার্থীদেরই। বেশ কিছুক্ষণ পর বিভ্রম ভাঙে। যখন মিছিলের ছেলে শিক্ষার্থীদের অংশটিও চোখে পড়ে। মিছিল চলছে আর চলছে। এর যেন কোনো শেষ নেই। হাজার হাজার শিক্ষার্থী। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ক্যাম্পাস। কোটা-সংস্কার, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধেও তারা নানা স্লোগান দেন। ক্যাম্পাসের ভেতরের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখা গেল এ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করতে। এরই মধ্যে অনেক আন্দোলনকারী জড়ো হতে থাকেন রাজু ভাস্কর্যের সামনে। ঘণ্টা দেড়েক পর ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি যখন রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হয় তখন পুরো এলাকা পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে।
এই দৃশ্য শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজু ভাস্কর্যের নয়। পুরো বাংলাদেশই যোগ দিয়েছে এ নজিরবিহীন বিক্ষোভে। দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস বা ক্যাম্পাসসংলগ্ন এলাকায় চলছে বিক্ষোভ। কোটা সংস্কারের ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত চলবে এ আন্দোলন।
না, এটা কোন সেলিব্রেটি শো নয়। এখানে কোন লাল-নীল-হলুদ নায়ক-নায়িকা যোগ দেননি। রাজনীতিবিদরা এখানে আসতে প্রতিযোগিতা করেননি। টিভি মিডিয়ায় লাইভ সম্প্রচার নেই। শুরুতে টিয়ারশেল আর বুলেট মোকাবিলা করতে হয়েছে। রক্ত ঝরেছে অনেক। নারী শিক্ষার্থীদেরও রক্ত ঝরানো হয়েছে। কোনো ভবন থেকে এদের জন্য কোনো খাদ্য আসেনি।
তারপরও তরুণরা অপ্রতিরোধ্য। তারুণ্যের এ স্রোত রোখার সাধ্য কারো নেই। এটাই এখন সবচেয়ে বড় সত্য।
খবর ৭১/ইঃ