গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কয়েকশ’ একর জমির তরমুজ নষ্ট

0
297

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : শুক্রবারের শিলাবৃষ্টিতে ভেসে গেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার চাষিদের আর্থিক স্বচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন। তরমুজ ও ফুটি চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন এ সব চাষি। মাত্র ১০ মিনিটের শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে কয়েকশ’ একর জমির ফসল। চাষিদের দাবী, এতে অন্ততঃ ২৫ ভাগ ফসল নষ্ট হয়েছে তাদের। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। আর কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতির পরিমাণ মাত্র ১০ ভাগ।
কোটালীপাড়া উপজেলার মাছবাড়ী গ্রামের উন্নতি বাড়ৈ। দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি দুই বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেছিলেন। ফলন ভাল হওয়ায় তিনিও স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের মাত্র ১০ মিনিটের শিলা বৃষ্টিতে সে স্বপ্ন ভেসে গেছে তার। শুধু উন্নতি বাড়ৈই নয়, এখানের ময়না বানু, শিল্পী অধিকারী, সুখ দেব বাড়ৈসহ অনেক কৃষকের অবস্থাই এখন একই রকম।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার হিজলবাড়ি, মাছবাড়ি, তেতুলবাড়িসহ ৯ গ্রামের কৃষকের প্রধান ফসলই হলো তরমুজ ও ফুটি (বাঙ্গি)। এখানকার কৃষকেরা সারা বছর একটি ফসলের উপরই নির্ভর করে থাকেন। সে জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ফসল চাষাবাদ করেছিলেন তারা। ব্যাপক শিলা বৃষ্টিতে তাদের খেতের তরমুজ ও ফুটি ফেটে নষ্ট হয়েছে। এখন তারা গাছ আর ফল বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ফসল নষ্ট হওয়ায় ঋণ ও সুদের টাকা কি ভাবে পরিশোধ করবেন, ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও সারা বছর কি ভাবে চলবে সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
চাষি ময়না বানু জানান, গত বছর এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তরমুজের চাষ করেছিলেন। সে বছরও অতি বৃষ্টিতে সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বারবার তাগিদ দিচ্ছিল এনজিও। ভেবে ছিলেন এ বছর তরমুজ বিক্রি করে ঋণ মুক্ত হবেন। কিন্তু শিলাবৃষ্টি তার সে আশাও নষ্ট করে দিয়েছে।
চাষি সুখদেব বাড়ৈ আক্ষেপ করে বললেন, এখন যে ফসল টিকবে তা বাজারে বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা আসলই উঠবে না। এখন সংসার চালাব না কি ঋণের টাকা শোধ করব তা ভেবেই পাচ্ছি না। ঋণের সুদ মাফসহ কয়েক মাস যাতে কিস্তি না দেওয়া লাগে সরকারের কাছে তিনি সে দাবী জানান।
চাষি শিল্পী অধিকারী বলেন, ৭ বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন ফসলই নেই। কি ভাবে দিন চলবে তা ভেবে পাচ্ছি না।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৮৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজ এবং ৪২০ হেক্টর জমিতে ফুটি চাষ করেছিল। ক’দিন পরেই এসব ফসল বাজারে ওঠার কথা। এই এলাকার কৃষকেরা প্রতি বছর শত কোটি টাকার তরমুজ ও ফুটি বিক্রি করে থাকেন।
ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের সেলস অফিসার জীবন কুমার পাল জানান, যে সব তরমুজ বা ফুটির ওপর শিলা বৃষ্টির আঘাত লেগেছে সে গুলো দু’এক দিনের মধ্যে পচন ধরতে শুরু করবে। সেই সাথে গাছগুলোও মরে যেতে পারে। কোন ওষুধ দিয়ে এগুলোর পচন রোধ করা সম্ভব নয়। তবে যে তরমুজ-ফুটি অনেকটা বড় হয়ে গেছে সে সবের হয়তো কিছু ভাল থাকবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, কৃষকদের এ ক্ষতির বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেও যাতে ঋনের সুদ মওকুফ এবং আগামী কয়েক মাস ঋণের কিস্তি দিতে না হয় সে অনুরোধ জানানো হবে।

খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here