মিসরে মাঠ ফাঁকা করে গোল দিচ্ছেন সিসি

0
372

খবর৭১: ভয়-আতঙ্ক-ত্রাস সৃষ্টি করে মিসরে রাজত্ব করছেন প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। চালু করেছেন ধর-পাকড়ের নীতি। গণতন্ত্রের লাগাম ধরে স্বৈরশাসন চালাচ্ছেন। দমন-পীড়নের মাধ্যমে ভয়ের রাজ্য কায়েম রেখেছেন। সাংবাদিক, সরকারি কর্মচারী, এনজিও কর্মী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছেলে-বুড়ো- সবার মনেই ‘সিসি ভয়’। চুন থেকে পান খসলেই বিপদ।

তার বিরুদ্ধে কৌতুক করে কথা বলতেও সাহস পান না কেউই। বিরোধী বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনে কারাগারকে ব্যবহার করছেন তিনি। লেলিয়ে দিচ্ছেন সেনা-পুলিশের পেটুয়া বাহিনী। বিচার বিভাগকেও চোখের ইশারায় ব্যবহার করছেন সিসি। তার শাসনামলে গত ৫ বছরে ১০ হাজারেরও বেশি রাজনীতিককে গ্রেফতার করেছেন। সিসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইলেও তাকে কারাগারে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা করে সবাইকে আতঙ্কে রেখে একা গোল দিচ্ছেন সেনাপ্রধান থেকে এক রাতে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া এ স্বৈরশাসক।

গত পাঁচ বছরে মিসরে বিনিয়োগ ও পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। জ্বালানির ওপর ভর্তুকি কর্তন ও করারোপের কারণে বাজেটে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২০১৬ সালে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতিও ক্ষেপিয়ে তুলেছে ব্যবসায়ীদের। ২০১১ সালে অভ্যুত্থানের আগের সময়ের মতোই বিদেশি রিজার্ভ নিম্নস্তরে। গত বছর দেশটির পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ লাখ, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ কম। কমে গেছে হোটেল-আবাসন ব্যবসা। তলানিতে নেমেছে বিদেশি বিনিয়োগ। এরপরও জনগণের মধ্যে টু শব্দটিও নেই। মুখ বুজে সহ্য করছেন নাগরিকরা। কেউ একটু এগিয়ে এলেই ঠাসা হচ্ছে কারাগারে।

দ্য ইকোনোমিস্ট জানায়, এতকিছুর পরও এবারের নির্বাচনে সিসির জয় নিশ্চিত। জনগণ নয়, সিসির সামনে এখন একটাই চ্যালেঞ্জ। সেনাবাহিনী ও শিল্পপতিরা তার নীতির বিরুদ্ধে ক্ষেপে গেলে সিসির হাত থেকে মুক্ত হবে মিসরের মসনদ। তবে চার বছর মেয়াদের দ্বিতীয় দফার বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার নিয়ম নেই সংবিধানে। অনেক এমপি এ ধারা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আবার অনেকে বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদের পর আর ক্ষমতায় থাকবেন না সিসি। এ বিষয়ে প্রাইভেট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আপনি আম খেতে ভালোবাসলেও, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিন আম খেতে কিন্তু আপনার ভালো লাগবে না।

মিসরে সোমবারের নির্বাচনে যারাই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, ধড়-পাকড়ের মাধ্যমে তাদের সরিয়ে দিয়েছেন সিসি। সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব স্টাফ সামি আনান নির্বাচনে সিসির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২৩ জানুয়ারি হোসনি মোবারক যুগের এ জেনারেলকে আটক করা হয়। ডিসেম্বরে কর্নেল আহমেদ কোনোসোয়াকেও গ্রেফতার করা হয়। সামরিক আইন ভঙ্গ করে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের অভিযোগে সামরিক আদালতে তাকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলে বিমানবাহিনীর সাবেক কমান্ডার ইন চিফ আহমেদ শফিককে শাসানো হয়। পরে ভয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান শফিক। মানবাধিকার আইনজীবী খালিদ আলীও নির্বাচনের ঘোষণা দেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে তাকে জোর চাপ দেয়া হয়। এতে কোনো কাজ না হওয়ায় তার দফতরে সামরিক অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। খালিদকে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

হঠাৎ করেই ৬৩ বছর বয়সী সিসির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাত্র দু’মাস আগে দৃশ্যপটে হাজির হন ৬৫ বছর বয়সী মিসরীয় রাজনীতিক মুসা মোস্তফা। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২৯ জানুয়ারি প্রার্থিতার ঘোষণা করেন তিনি। কয়েক মাস আগে থেকেই সিসি যেখানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে জনসম্মুখেই দেখা মেলেনি মুসাকে। তিনি যে আদৌ নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, রাজধানী কায়রোর কোথাও তেমন কোনো চিহ্নও নেই।

প্রচারণার লক্ষ্যে নিয়মিত টিভি ও পত্রপত্রিকায় হাজির হচ্ছেন সিসি। রাজধানী কায়রোসহ বিভিন্ন শহরে সিসির পোস্টার-ব্যানারে সয়লাব। তবে মুসাকে সমর্থন করে পোস্টারের ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি শহরগুলোতে। আলজাজিরা জানায়, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সিসিকেই সমর্থন জানিয়েছিলেন মিসরের ঘাদ পার্টির নেতা মুসা। নিজের জন্য নয়, সিসির ‘জয়’ আইনসম্মত করতেই প্রার্থী হয়েছেন তিনি। আর বিশ্লেষকরা তো আগেই বলেছেন, মিসরের এবারের নির্বাচন ‘মনিব-মোসাহেব’ নির্বাচন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here