মো. আব্দুল বাছিত
সিফডিয়া, সিলেট: বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা কবি আহমেদ বকুলের রচনা ও পরিকল্পনায় সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যের আলোকে নির্মিত গীতিপ্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘সিলেটের পাঁচালী’-এর প্রদর্শনী অনুষ্ঠান গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিলেটের পাঁচালীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসেডর বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী শুভ্র দেব, কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী, সিলেটের পাঁচালীর প্রযোজক মো. এলাইছ মিয়া মতিন এবং শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেটের পাঁচালীর গীত রচয়িতা এবং পরিকল্পনাকারী কবি-গবেষক আহমেদ বকুল।
সিলেটের পাঁচালীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসেডর বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী শুভ্র দেব বলেন, সিলেটের পাঁচালী ব্যতিক্রমধর্মী একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র যার মাধ্যমে বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটা শুধু সিলেটবাসীর সম্পদ নয়, গোটা বাংলাদেশের সম্পদ। এই প্রামাণ্য চিত্রকে বিশ^ দরবারে সঠিকভাবে তুলে ধরা হলে সিলেট তথা সারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। আমি, আমরা সকলেই সিলেটের পাঁচালীর প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করলে একটা ভালো সম্ভাবনা তৈরী হবে। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, এক ঘণ্টা সাত মিনিটের প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন শেষ হলে মনে হবে আরো কিছু যেন বাকী থেকে গেলো!
অনুভূতি ব্যক্ত করে কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী বলেন, এরকম একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করা অত্যন্ত জটিল এবং কঠিন কাজ। আমি প্রথমে স্ক্রীপটি পড়ে বুঝেছি অনেক গবেষণালব্ধ একটি কাজ। যার কারণে আমিসহ শ্রদ্ধেয় বিদিত লাল দাশ, সুবীর নন্দী, শুভ্র দেবসহ অনেক কণ্ঠশিল্পী স্বপ্রণোদিত হয়ে এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে আমাদের যথাসাধ্য ভূমিকা রেখেছি। এখন সিলেটের সংস্কৃতিপ্রেমী ও সুশীল সমাজের দায়িত্ব একে বিশ^ দরবারে পৌঁছিয়ে দেওয়া।
সিলেটের সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং গুণীজনদের উপস্থিতিতে আয়োজিত প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সিলেটের পাঁচালীর লেখক গবেষক ও পরিকল্পনাকারী আহমেদ বকুল চলচ্চিত্রটি নির্মাণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ২০০৭ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির কর্মকান্ড শেষ হয় ২০১৪ সালে। ইতোমধ্যে পাঁচালী নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি মারা গেছেন। নানাবিধ কারণে এই প্রকল্পটি জনসমক্ষে আসতে বিলম্ব হয়। এটি নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হয়েছে। কেননা, গীতিকাব্যধর্মী এত বড় আঙ্গিকে কোনো কাজ বাংলাদেশে এ যাবত হওয়ার নজীর নেই। কাজটি প্রথম করতে গিয়ে অনেক জটিল পরিস্থিতি অতিক্রম করে অবশেষে সকলের সহযোগিতায় সিলেটের মানুষের সামনে আমরা তা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সিলেটের পাঁচালী ইউটিউব চ্যানেলে শীঘ্রই প্রচার করা হবে। পাঁচালী চ্যানেল সাবস্ক্রাইভ ও শেয়ার করে সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাণীকে বিশ^ দরবারে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি সিলেটবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান। সিলেটের পাঁচালীর প্রযোজক ও উপদেষ্টা মো. এলাইছ মিয়া মতিন বলেন, প্রবাসীদের সন্তানরা দেশে আসতে অনিচ্ছুক, তারা সবসময় দেশের নেতিবাচক প্রচারণা শুনে আসছে। যার কারণে দেশের প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাদের সামনে দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরে তাদেরকে স্বদেশমুখী করার উদ্দেশ্যেই আমি সিলেটের পাঁচালী প্রযোজনা করেছি। এটা সিলেটবাসীর জন্য আমার উপহার।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দৈনিক সিলেট সংলাপের সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান, বাংলা টিভির সিলেট প্রতিনিধি আবু তালেব মুরাদ। এক ঘণ্টা সাত মিনিট ব্যাপী চলা প্রদর্শনীতে দুই শতাধিক দর্শক পিনপতন নীরবতায় প্রামাণ্য চিত্রটি উপভোগ করেন এবং প্রদর্শনী শেষে দর্শক উচ্চ¦সিত প্রশংসায় ফেটে পড়েন। অনেকেই বলেন, এরকম কোনো প্রামাণ্য চিত্র দেখাতো দূরের কথা, কল্পনাও করতে পারেননি! জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, এটা অনেক বড় কাজ। এটা নির্মাণ করা কোনো সহজ কাজ নয়। আমার জীবনের প্রথম এমন এক বৈচিত্র্যপূর্ণ চলচ্চিত্র দেখে অভিভূত হলাম। তিনি নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত সকলকে সাধুবাদ জানান। আবৃত্তিশিল্পী সাইমুম আনজুম ইভানের সঞ্চালনায় প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী, সিলেট নজরুল একাডেমীর সাবেক সভাপতি বদরুজ্জামান সেলিম, শিল্পী হিমাংশু বিশ^াস, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এ জেড এম রওশন জেবীন, লেখক-সাংবাদিক রহমত আলী, বিশ^নাথ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দিক হোসেন সাজুল, অভিমত ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক জাবেদুর রশিদ, দক্ষিণ সুরমা যুবলীগের আহবায়ক নূরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আজিজুর রহমানের পরিবার, লন্ডনের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আব্দুল মতিন ও বর্তমান কাউন্সিলর আতিকুল হক, দি নিউ নেশনের সিলেট ব্যুরো চীফ শফিক আহমদ শফি, শিল্পী শিপল চৌধুরী, ব্যাংকার কামরান আহমদ প্রমুখ।
খবর ৭১/ ই: