খবর৭১: আর্থিক খাতে ‘রক্তক্ষরণ’ হচ্ছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে জাতীয় সংসদে। অর্থমন্ত্রী আগামী ডিসেম্বরে অবসরে যাওয়ার যে ঘোষণা দিলেও, ততদিন অপেক্ষা করতে রাজি নন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
বাবলু বলেন, ‘আপনি ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন আপনি রক্তক্ষরণ কনটিনিউ করবেন?’
রবিবার বিকালে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা।
গত কয়েক বছর ধরেই ব্যাংকের ঋণ জালিয়তি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া খেলাপি ঋণ আদায়েও উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই।
এর মধ্যে শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনায় অর্থমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তার মতে মুহিত ‘অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে যাচ্ছে।’
আর শনিবার রাজধানীতে অগ্রণী ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে এর জবাব দেন মুহিত। বলেন, ‘বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেবের বোধহয় সেরকম রিটায়ারমেন্টের কোনো ধারণা নেই। সুতরাং তাকেই উপদেশ দিতে চেয়েছিলাম যে, জীবনে একটা সময় আসে বোধহয় তখন রিটায়ারমেন্ট করাটাই আমাদের জন্য ভাল। এত লম্বা ক্যারিয়ার আবার খুব ভাল না। বহুদিন থাকলে পরে নিশ্চয়ই একটা পচন আসে। সুতরাং আমারও সেরকম চিন্তাবভাবনার খুবই প্রয়োজন এবং আমি সেটা করেই রেখেছি। এইবারে সত্যিকারভাবে যাকে বলে রিটায়ার আমি করতে যাচ্ছি আগামী ডিসেম্বরে।’
সংসদে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু অর্থমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমাদের বাঁচান, দেশকে বাঁচান, জাতিকে বাঁচান। ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়েট করার দরকার কী? আপনি আজই অবসরে চলে যান।’
এর আগে জাতীয় পার্টিরই কাজী ফিরোজ রশীদ পয়েন্ট অব অর্ডারে পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক দরপতন নিয়ে কথা বলেন।
ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংকের এডি রেশিও কমানোর পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের আগে পরে বাজারে ব্যাপক মূল্যপতনের বিষয়টি তুলে ধরেন।
ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘প্রত্যেক শেয়ার নিম্নমুখী। এই মুহূর্তে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে স্টক একচেঞ্জ তার ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করার ষড়যন্ত্র করছে। পাবলিক লিমিডেট কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে হলে প্রথম লিস্টিং করতে হবে। সামনে নির্বাচন সেই সময় এটা করা হচ্ছে।একদল ইন্ডিয়া ঘুরে আসছে, আরেক দল চায়না ঘুরে আসছে।’
পবে বাবলু বলেন, ‘দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। অর্থপাচার নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রথম পানামা পেপারসে নাম এলো, অর্থমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নিলেন না। এরপর এলো প্যারাডাইস পেপারস নামসহ অনেক ব্যবসায়ীর নাম। তাতেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। ব্যাংক খাতে চলছে আতঙ্ক উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি। এই হচ্ছে মানি মার্কেটের অবস্থা।’
পানামা পেপার কেলেঙ্কারির জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে পদত্যাগ করতে হয়েছে জানিয়ে বাবলু বলেন, ‘আমাদের ২৭জনের নাম এসেছে। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কত টাকা পাচার হয়েছে, তারও কোনও হিসাব অর্থমন্ত্রী সংসদে দেননি।’
‘প্যারাডাইস পেপারস, পানামা পেপারসে কোনও রাজনীতিবিদের নাম আসেনি। যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় কিসের? সুশীল সমাজ অনেক কথা বলে। আমাদের নামে (রাজনীতিবিদদের) কোনও অ্যাকাউন্ট বের করতে পারেনি। তাদের নামেই বের হয়েছে।’
কয়েক বছর আগে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর অর্থমন্ত্রীর একটি বক্তব্য তুলে ধরে বাবলু বলেন, ‘তিনি মাঝে মাঝে বলেন, চার হাজার কোটি টাকা কোনও টাকা হলো? এর দায়িত্ব আপনাকে (অর্থমন্ত্রীকে) নিতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে আজই অবসরে যান। দেশ ও জাতিকে পরিত্রাণ দিন।’
রাষ্ট্রায়াত্ব সোনালী, জনতা, রূপালী ও বেসিক ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে টাকা দেয়ার সমালোচনা করেন বাবলু। বলেন, ‘গত কয়েক বছরে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কার টাকা এটা?
‘সব ব্যাংকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ছোট বেলায় শুনতাম, যার হয় যক্ষা, তার নাই রক্ষা। অর্থনীতির যক্ষা হয়েছে, অর্থনীতির কোনও রক্ষা নাই। বাঁচাতে হবে।’
‘অর্থনীতির রক্তক্ষরণের কারণে দেশের রক্তক্ষরণ হচ্ছে, জাতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’
খবর৭১/এস: