নওগাঁয় ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরী করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামীন নারীরা

0
697

লোকমান আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি: অভাব অনটনের সংসারে বড় মেয়েকে কলেজে পড়াশুনা করাচ্ছিলেন প্রতিবেশীদের সহযোগীতায়। পরিবারের পাঁচজন সদস্য। স্বামী বক্ষ ব্যাধীতে আক্রান্ত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি ফেরদৌসি আকতার। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বড় মেয়ে কিছুদিনের মধ্যে মারা যান। যেন দুংখের আর শেষ নেই পরিবারটিতে। এক নিকট আত্মীয়ের পরামর্শে ঝুট কাপড় (গার্মেন্ট কাপড়) থেকে দড়ি তৈরী শুরু করেন ফেরদৌসি আকতার।

গত ৬ বছর থেকে দড়ি তৈরী এবং বিক্রি করে বেশ ভাল লাভ আসতে থাকে। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দড়ি তৈরীর আয় দিয়ে স্বামী ঔষধ, সংসারের যাবতীয় খরচ এবং এক ছেলে ও এক মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা।

শুধু ফেরদৌসি আকতার নয়, নওগাঁ সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরীর সাথে সম্পৃক্ত গ্রামীন নারীরা। নওগাঁ সদর উপজেলা, রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার ২০-২৫ টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার গ্রামীণ নারীরা গার্মেন্টেসের ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরী করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

আর দড়ি তৈরীকে তারা পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন। এ ঝুট কাপড় থেকে শিখা, গরু ও ছাগলের দড়ি তৈরী হয়। এ কাপড় থেকে তৈরী দড়ি মজবুত ও টেকশই বলে পানের বরজে বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় চাহিদাও বেশি। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নেয়ায় লাভের একটি অংশ চলে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধে। সরকারী সহযোগীতা ও স্বল্প সুদে ঋণের দাবী করেছেন গ্রামীন এসব নারীরা।

প্রতিটি ঝুট কাপড়ের বস্তার ওজন ৮০-৮৫ কেজি। প্রতিকেজি ঝুট কাপড়ের দাম ৪৫ টাকা। একটি বস্তা থেকে দড়ি তৈরী করে বিক্রির পর লাভ আসে প্রায় এক হাজার ৫০০ টাকা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে সপ্তাহে দুই বস্তা ঝুট কাপড় থেকে তৈরী করা যায়।

সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী গ্রামের ফেরদৌসি আকতার বলেন, প্রতি সপ্তাহে দড়ি বিক্রি করে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। আর এখান থেকে প্রতিমাসে স্বামীর জন্য আড়াই হাজার টাকার ঔষধ, সাংসারিক খরচ, বাচ্চাদের পড়াশুনা সবকিছুই করতে পারছি। আল্লাহর রহমতে আগের তুলনায় এখন ভাল ভাবে চলতে পারছি।

একই গ্রামের রেবেকা বিবি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। স্বামী কৃষি কাজ ও ভ্যান চালায়। আর সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এ দড়ি তৈরীর কাজ করি। আর এর আয় থেকে স্বামীকে সহযোগীতা ও সংসারের খরচ মেটান। আমরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ঝুট কাপড় গুলো কিনে থাকি। দড়ি বিক্রির পর লাভের একটি অংশ চলে যায় ঋণ পরিশোধে। সরকার থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পেলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।

নওগাঁ সদর উপজেলার ঝুট কাপড় পাইকারী ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বলেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসে ঝুট কাপড় কিনে যায় নারীরা। এরপর তারা দড়ি তৈরী করে আবার আমার কাছে বিক্রি করে। আর এসব দড়ি বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর থেকে এসে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যায়।

নওগাঁ শিল্প সহায়ক কেন্দ্র উপ-ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, দারিদ্রগোষ্ঠী জনগণকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সম্প্রসারনে লক্ষে বিসিক কাজ করে যাচ্ছে। জেলায় যারা শিল্প উদ্যোক্তা আছেন তাদেরকে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঋণ এবং শিল্পকারখানা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করে থাকেন। যেসব উদ্যোক্তা আছেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে সর্বাত্মক সহযোগীতা করব।

খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here