সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন এলাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর আব্দুর রাজ্জাক, তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এই নির্দেশনা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মানিলন্ডারিং পরিপালন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক হিসাব স্থগিতের চিঠিতে আব্দুর রাজ্জাক, তার দুই ছেলে রেজওয়ান শাহনেওয়াজ সুজিত ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত এবং মেয়ে ফারজানা আক্তার তন্দ্রার পিতা–মাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া স্ত্রী শিরিন আক্তার বানুর কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাংগাইল-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের তৎকালীন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুর রাজ্জাক ২০১৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনার জন্য গঠিত নির্বাচন সংক্রান্ত পর্যবেক্ষক সমন্বয় উপকমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। বিভিন্ন সময় তিনি দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সাধারণ সম্পাদকের পদের আলোচনায়ও তিনি রয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বাধা দেওয়া এবং হত্যার অভিযোগে কয়েক শ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দলের প্রভাবশালী কয়েক ডজন নেতাকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টা এবং সংসদ সদস্য। টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন কার্যত ছন্নছাড়া অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
দলীয় প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কিছু নেতা পালিয়ে বিদেশে চলে গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পঁচাত্তরের পর সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ।