ইসির ক্ষমতা রহিত হয়নি, বেড়েছে: সিইসি

0
97

খবর ৭১: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ এ (এ) ধারা সংশোধনের ফলে ভোটের দিনের আগে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে কি না, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটির উত্তর এড়িয়ে যান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটির উত্তর না দিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেব না। আপনি বুঝে নিজেই উত্তর দেন।’

পরে মেজাজ হারিয়ে সংবাদ সম্মেলনস্থল ছেড়ে নিজ কক্ষে চলে যান সিইসি। এর আগে ইলেকশনের জায়গায় পোলিং শব্দটা আসার প্রসঙ্গ টেনে কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এতে আমরা তো বুঝি। আপনারা যা বোঝেন, তা বুঝতে থাকেন। আমরা জানি, আমরা বুঝি। এটা নিয়ে আপনারা যদি চিন্তাভাবনা করেন, চিন্তাভাবনা করতে থাকেন।’

তফসিল ঘোষণার পরদিন যদি মনে হয়, ভোটের পরিবেশ নেই, তাহলে ভোট বন্ধ করা যাবে কি না, এমন বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘সেটা হাইপোথেটিক্যাল। আমি রিপ্লাই করতে যাব না। ওই ধরনের পরিবেশ হতে দিন। ওইভাবে পরিবেশ হতে দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

ইলেকশন শব্দটির পরিবর্তে পোলিং শব্দটি কেন আনা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ইলেকশন শব্দটা হচ্ছে জেনাস। ইলেকশনের আন্ডারে পোলিং। পোলিংয়ের আন্ডারে কখনও ইলেকশন হয় না। তো যেটা হচ্ছে একটা নির্বাচন করে যিনি নির্বাচিত হলেন, উনি পোলড হবেন না, উনি নির্বাচিত হবেন। আর পোলিংটা হবে যেই অংশটাতে ভোটাররা গিয়ে ভোট দেবেন।

‘ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটাকে পোলিং বলা হয়। আমাদের আরপিওতে দেখবেন, ইলেকশন আর পোলিং শব্দটা ডেফিনেশনে আছে। কাজেই এই জিনিসটা বুঝবেন। এটাকে বিশাল করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন তার পায়ে কুঠার মেরে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশন ভুল করতে পারে, কিন্তু কুঠার মারে নাই। আমরা বলছি, এটা সুচিন্তিতভাবে কারেকশন করেছি। এখানে আসলে ইলেকশন হবে না, পোলিং হবে।’

‘সিইসির আইনে কী আছে? আপনারা কি পারবেন ভোট বন্ধ করতে?’

উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘সুযোগ নাই কেন? আইনে কোথায় নাই? যদি ওর আগের দিন বিভিন্ন কারণে একটা ইলেকশন…একটা বেঞ্চমার্ক থাকে যে, এই এই কারণে নির্বাচন বন্ধ করতে পারবেন, এই এই কারণে বন্ধ করতে পারবেন না। যদি এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তখন অসম্ভব পরিস্থিতি কমিশনের কাছে মনে হলে কমিশন কেন পারবে না? এটা নিয়ে গবেষণাটার প্রয়োজন হলো কেন, আমি বুঝতে পারলাম না।’

‘নতুন আইন মনে করেন হয়নি’ মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এখন ভোটের আগে তেমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কমিশন সভা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’

আইন না থাকলে কী করে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৯১ (এ)তে কোনো ক্ষমতা রহিত হয় নাই, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাচ্ছি।’

আইনের বাইরে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সেটি হলে সেটাকে বলা হয় ইনহেরেন্ট পাওয়ার। আইনে কী লেখা নির্বাচনের আগের ভূমিকম্প হয়ে ৫০ লাখ মারা গেলে ভোট বন্ধ করতে হবে? ওই কথা তো লেখা নেই। তারপর কি আমরা নির্বাচন করব? সেই পরিস্থিতিতে কমিশন বসে আইনকানুন দেখে সিদ্ধান্ত নেবে।’

নির্বাচনের আগে কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কমিশন ভোট বন্ধ করতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন ভূমিকম্প হয়ে লক্ষ লোক মারা গেছে…কমিশনের কিছু ইনহেরেন্ট পাওয়ার আছে। কমিশন পারবে না কেন? অনিয়ম যদি হয়, নির্বাচনের আগে, আমাদের বিধান আছে তদন্ত করতে হবে। তদন্ত করে অনিয়ম যিনি করেছেন তার প্রার্থিতা বাতিল করার সুস্পষ্ট একটা বিধান আছে।

‘আমরা যদি দায় নিরূপণ করতে পারি কে অনিয়ম করেছেন, তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন চালিয়ে নিতে পারব। আর পোলিং বা ইলেকশন শব্দটির কারণে কোনো হেরফের হবে না। এক্সিজটিং বিধানের কারণে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।’

আরপিও সংশোধন নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রজ্ঞা অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে অনেকে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ক্যাবিনেটে অনুমোদিত হয়। সেখানে সামান্য একটু পরিবর্তন উনারা করেননি, আমাদের মতামত চেয়েছিলেন। সেটা হলো ৯১ এ(এ)তে সামান্য পরিবর্তন ছিল। আমরা বলেছিলাম যে, কোনো আসন এলাকায় অনিয়ম হলে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। উনারা বলেছিলেন যে আমরা শুধু যেখানে যে কেন্দ্রে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে, সেগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য। এটা আমাদের কাছে খুবই যৌক্তিক মনে হয়েছে।

‘এটি কিন্তু সম্পূর্ণ একটি নতুন ধারা ছিল। যেটা ৯১ এর এ ধারা সেখানে কিন্তু আমরা পরিবর্তন করি নাই এবং সরকার বা সংসদ থেকেও কোনো রকম পরিবর্তন আনা হয়নি। সেদিক থেকে এই আইনটি বিল আকারে পাস হয়েছিল। গতকাল মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর গেজেট হয়েছে।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের উদ্দেশে বলার কারণ হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য এসেছে। এতে করে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে যে, এতে করে আমরা মনে করি যে, সব ব্যাখ্যা এসেছে তা সবগুলো সঠিক নয়। যেমন: প্রথম যেটা বলা হয়েছিল, কমিশন বুঝে না বুঝে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে এবং কমিশন গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল এবং ৯১ (এ)তে সংশোধন এসেছে। আসলে তা হয়নি। সেটা হুবহু আগের মতোই আছে। ৯১ এ(এ)তে নতুন একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে।

‘সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আরপিও সংশোধন করেছে, এমন মন্তব্যও এসেছে, কিন্তু সরকার আরপিও সংশোধন করে নাই। করেছে, তবে আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী। নির্বাচন কমিশন তার অবস্থান আরও সংহত, দৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্য যে সংশোধনগুলো চেয়েছিল, সে সংশোধনগুলোতে সরকার সম্মত হয়েছে। এতে আমাদের ক্ষমতা বেড়েছে। ৯১(এ)তে সংশোধন হতো, তবে আমাদের ক্ষমতা কিছু হেরফের হতো।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওখানে কিছু করা হয়নি, ওইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারা যে পোলিং পিরিয়ডে আমরা যে একটি, দুটি বা সমস্ত আসনের নির্বাচন আমরা বাতিল করে দিতে পারি, সেটা হুবহু আগের মতোই আছে।’

৯১ এ(এ) ধারা সংযোজন প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল বলেন, ‘আমরা যেটা চেয়েছিলাম নির্বাচন হওয়ার পরে গেজেট করার পর আর কোনো কাজ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকে না। সেখানে আমরা বলেছিলাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে, সরকারি ফলাফল প্রকাশের পর বড় ধরনের কোনো বিতর্ক থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে কমিশন সেই বিষয়টি তদন্ত করতে পারবে, গেজেট স্থগিত রেখে।

‘সেই জায়গায় সরকার এবং সংসদ বলেছে সমস্ত আসনের নির্বাচন বাতিল না করে যেই কেন্দ্রে ফলাফল বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হবে, সেই সেই কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। আমরা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার বিষয়টি…পাঁচজনের একটা কমিশন, আমরা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো কাজ করব, এটা অবান্তর একটা মন্তব্য। আমি এ বিষয়ে তেমন আর কিছু বলতে চাই নাই।’

নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার আইন সংশোধন করেনি দাবি করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সরকার আমদের সম্মান দেখিয়েছে। আমরা যেটা চেয়েছিলাম, সেটা নাও করতে পারতেন সেটা সরকারের অধিক্ষেত্র। কিন্তু আমরা যেটা চেয়েছিলাম, সেখানে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। তারা আমাদের প্রস্তাবিত সংশোধনগুলো সংসদে নিয়ে পাস করে দিয়েছে।

‘দুই-চারদিন আগেই একটা পত্রিকায় বলা হয়েছে, কমিশন থেকেই ক্ষমতা কমানো প্রস্তাব গিয়েছে। এটি একেবারেই অবান্তর। কমিশন কখনোই তার ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব পাঠায়নি। পাঠাতে পারেও না। আর এতটা দায়িত্বহীন কমিশন হবে, এটা চিন্তাও করা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় পোলিং এবং ইলেকশন শব্দের কথা বলেছে। আমরা তিনটা জায়গায় ইলেকশন শব্দের পবিবর্তে পোলিং দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছি। এটা হলো ক্লারিক্যাল কারেকশন। ক্লারিক্যাল কারেকশন এবং অ্যামেন্ডমেন্ডের মধ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে। অ্যামেন্ডমেন্ডের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য থাকে, যেটা অর্থকে পরিবর্তন করে দেয়।

‘ক্লারিক্যাল কারেকশন হচ্ছে জাস্ট সংশোধন। পানি বানান করতে গিয়ে উ-কার দিয়ে ফেলেছিলাম, কেউ সেটা ই-কার দিয়ে করতে পারে, যেটা কারেকশন। এটাকে নিয়ে অপব্যাখ্যা করাটা দুঃখজনক বলে মনে করি।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করব যারা বিজ্ঞজন আছেন, আমরা পুরো জাতি প্রত্যাশা করছি একটা সুন্দর নির্বাচন হোক। নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনকে হেয় করা বা খাটো করা যেমন বাঞ্ছনীয় নয়, যেমন নির্বাচন কমিশনকে তারা যদি গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন, আমরা উপকৃত হব।

‘আমরা যেকোনো গঠনমূলক সাজেশন বিবেচনায় নিতে সদা প্রস্তুত। আগামী নির্বাচনটাকে সুন্দর করার জন্য আমরা প্রত্যাশা করি যে কোনো আইন বা বিধিবিধানে ভালো কোনো সংশোধন সম্ভব হয়, আমরা হয়তো আগামীতেও করব।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here