করোনায়’ কমল প্রত্যাশিত গড় আয়ু

0
127

খবর৭১ঃ
করোনায় কমল প্রত্যাশিত গড় আয়ু। ফাইল ছবি
করোনার ধাক্কায় কমল প্রত্যাশিত গড় আয়ু। এ হার দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর বা ৭২ বছর ৩ দশমিক ৬ মাস। যেটি ২০২০ সালের জরিপে ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। এক্ষেত্রে কমেছে ছয় মাস।

প্রত্যাশিত গড় আয়ু হচ্ছে আজ যে শিশু জন্মেছে সে ওই সময় পর্যন্ত গড় আয়ু পাবে।

এর আগে ২০১৯ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৬ বছর। এর পাশাপাশি বেড়েছে মানুষের মৃত্যুর হার। এক্ষেত্রে স্থূল মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৫ দশমিক ৭ জন। ২০২০ সালে ছিল ৫ দশমিক ১ জন। পল্লিতে ২০২১ সালে হয়েছে ৬ জন, যা ২০২০ ছিল ৫ দশমিক ২ জন। শহরে ২০২১ সালে ৪ দশমিক ৮ জন, যা তার আগের বছরে ছিল ৪ দশমিক ৯ জন।

বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২১ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ভবনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বিবিএস সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে প্রত্যাশিত গড় আয়ু কিছুটা কমেছে। তবে পরিসংখ্যাতগত দিক থেকে এটাকে কমা বলা যায় না।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক বছরের নিচের বয়সি শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে মোট ২২ জন, যা ২০২০ ছিল ২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ প্রতি হাজারে ২৩ জন ও নারী ২১ জন। এক্ষেত্রেও বেড়েছে মৃত্যুর হার।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বেতে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন। বক্তব্য দেন ডেমেগ্রোফিক এন্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মাসুদ আলম এবং মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন মাসুদ আলম।

স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পল্লি হতে পল্লিতে স্থানান্তর প্রতি হাজারে ৩১ দশমিক ৯ জন, যা ২০২০ ছিল ৩২ দশমিক ৭ জন। শহর হতে পল্লিতে স্থানান্তর ৮ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৪ দশমিক ৭ জন। এক্ষেত্রে শহর থেকে গ্রামে মানুষের ফিরে যাওয়া বেড়েছে।

শহর এলাকার অর্থাৎ শহরের মধ্যেই স্থানান্তর ১২৫ দশমিক ৯ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ১০৯ দশমিক একজন। পল্লি হতে শহরে স্থানান্তর ৩০ দশমিক ৮ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৩১ দশমিক ৩ জন। শহর হতে শহরে স্থানান্তর ৯৫ দশমিক ১ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৭৭ দশমিক ৮ জন। বহির্গমন হার প্রতিহাজারে ৫৫ দশমিক ৯ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৩ জন।

প্রতি পরিবারের (খানা) সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ৩ জন। এটি আগের জরিপেও একই ছিল। খানা প্রধানের শতকরা পুরুষের হার ৮৪ শতাংশ অর্থাৎ ৮৪ শতাংশ পরিবারের প্রধান হচ্ছেন পুরুষ। যেটি ২০২০ সালে ৮৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে কমেছে। কিন্তু মহিলা প্রধানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১৫ শতাংশ।

পরিবারের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্যাপ এবং নলকূপের খাবার পানি ব্যবহার করে শতকরা ৯৭ শতাংশ মানুষ, যা ২০২০ সালে ছিল ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ। উন্নত উৎস হতে খাবার পানি ব্যবহার করে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ। নিরাপদ খাবার পানি ব্যবহার করে ৭৩ দশমিক এক শতাংশ। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে শতকরা ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ। সোলার ব্যবহার করে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করে শতকরা ব্যবহার করে ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ। উন্মুক্ত স্থানে মল ত্যাগ করে ১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

দেশের ৭ বছর থেকে তার উপরে স্বাক্ষরতার হার শতকরা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। পুরুষের শতকরা হার ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ। মহিলা ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ।

১৫ বছর ও তার উপরে জনসংখ্যার স্বাক্ষরতার হার শতকরা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এরমধ্যে পুরুষের হার ৭৭ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ২ শতাংশ। মহিলা ৭১ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২০ ছিল ৭৩ শতাংশ।

গত বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ১২ লাখ ৯৭ হাজার জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৫৩ হাজার জন এবং মহিলা ৮ কোটি ৬৪ হাজার ৫৪ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ। হিন্দুসহ অন্যান্যরা কমে হয়েছে ১১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বেড়েছে। ২০২১ সালের জরিপে এটি দাঁড়িয়েছে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশে, যেটি ২০২০ সালের জরিপে ছিল ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই বেড়েছে। পল্লিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পতদ্ধতি ব্যবহার করে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ। শহরে ব্যবহার করে ৬৫ শতাংশ, যা আগের জরিপে ছিল ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া জন্ম নিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে ১ শতাংশ দম্পত্তি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। তাই এটি আগামীতে প্রকল্পের আওতায় না করে বিবিএসের রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা হবে। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের হাড়ির খবর উঠে এসেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে এসডিজির ২৬টি ইন্ডিকেটরের তথ্য পাওয়া যাবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। এখানে দেখা গেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধিও হার বেশি। যেটি উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্যাপ বা টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি হওয়ার কিছু নেই। কেননা দেশের ৬১ জেলায় টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক আছে। সেই সঙ্গে ট্যাপের পানি পান করা কতটুকু নিরাপদ সেটিও প্রশ্ন সাপেক্ষ।

তিনি আরও বলেন, শহর থেকে মানুষ গ্রামে যাচ্ছে, এর অন্যতম কারণ হলো এখন গ্রামে কর্মসংস্থান বেড়েছে। কৃষির বহুমুখীকরণ হয়েছে। কৃষিজাতীয় কাজ বেড়েছে। তাই শহরের চেয়ে গ্রামে কাজ বেশি। ফলে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here