ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো উপাত্ত সুরক্ষা আইনেরও অপপ্রয়োগ হবে: টিআইবি

0
121

খবর ৭১: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইনেরও যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ হওয়ার শঙ্কা করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, প্রস্তাবিত আইনটি নিশ্চিতভাবে জনগণের বাকস্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন করবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের হয়রানির যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে উপাত্ত সুরক্ষা আইন দিয়েও তেমন কিছু করা হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই বলে মনে করে টিআইবি।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩’ এর সর্বশেষ খসড়া বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো এই আইনেরও যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ হবে বলে মনে করি। ব্যক্তির তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবে সরকারের মদতে। সরকারের মত বা অবস্থানের বিরুদ্ধে গেলে যে-কোনো সংস্থার সার্ভারে ঢুকবার, উপাত্ত মুছে ফেলার এবং উপাত্ত প্রক্রিয়া করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে। ফলে সরকারের ব্যক্তির ওপর নজরদারির ক্ষমতা, এর অপপ্রয়োগ এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার হবে।

উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩ এর খসড়া গত ২৪ মার্চ অংশীজনের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এটি চতুর্থ খসড়া। টিআইবি গত ২৮ মার্চ ৪১টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ কর্তৃপক্ষের কাছে বিবেচনার জন্য পাঠায়। এখানে টিআইবির বিভিন্ন প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলেও মূল উদ্বেগের জায়গাগুলো থেকেই যাচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি নজরদারির জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানানো হলেও, আলোচ্য খসড়ার নবম অধ্যায়ে উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার নিয়োগ দেবে সরকার। ওই এজেন্সিকে যে কোনো ব্যক্তির উপাত্ত ও সার্ভারে প্রবেশাধিকার, উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া এবং উপাত্ত মুছে ফেলার ক্ষমতা দেওয়া আছে। এটি উদ্বেগের বিষয়।

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, খসড়ায় তিন ধরনের উপাত্তের কথা বলা হয়েছে। সংবেদনশীল উপাত্ত, ব্যবহারকারী সৃষ্ট উপাত্ত ও শ্রেণিবদ্ধকৃত উপাত্ত যা দেশের সীমানার ভেতরে মজুতের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি উপাত্ত স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশের সীমানার ভিতরে উপাত্ত মজুত করার বিধান রেখে কার্যত উপাত্তের উপর নজরদারির এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখা হয়েছে। সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে থাকা উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সির প্রচণ্ড ক্ষমতা এবং এর বিপরীতে অপব্যবহারের রোধের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, আলোচ্য খসড়াটি নিশ্চিতভাবে জনগণের সংবিধানস্বীকৃত বাকস্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ণ করবে।

তিনি বলেন, ছোট ও মধ্যম পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের জন্য উপাত্তের স্থানীয়করণ ব্যয়বহুল হওয়ায়, তারা প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে। পাশাপাশি সব পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তার ব্যয়ও বাড়বে।
অন্যদিকে কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে উপাত্ত সংরক্ষণ আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে, কোম্পানির প্রত্যেক মালিক, প্রধান নির্বাহী, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা প্রতিনিধি উক্ত অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন, যদি না তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, সেই অপরাধ তার অজ্ঞাতসারে হয়েছে বা অপরাধ রোধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।

এ বিষয়ে টিআইবির ব্যাখ্যা হলো, এই ধারার মাধ্যমে ফৌজদারি আইনে অপরাধ প্রমাণের দায় সংক্রান্ত নীতির সরাসরি বিপরীত ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে, নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সব প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ দেশি বিদেশি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য আইনগত ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগের বিধান রাখার কারণে এই ঝুঁকি কেবল আর্থিক দণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। বাংলাদেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের হয়রানির যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে উপাত্ত সুরক্ষা আইন দিয়েও তেমন কিছু করা হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here