সরকারি নির্দেশনা মানায় উদাসিন মানুষ, বিধি মানাতে তৎপর প্রশাসন

0
164

মিজানুর রহমান মিলন সৈয়দপুর :
জীবন জীবিকার তাগিদে লকডাউনের মতো কঠিন সিদ্ধান্তে না গিয়ে করোনা মহামারীর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের দেয়া ১১ দফা নির্দেশনা মানা হচ্ছে না সৈযদপুরে। সরকারি ওই নির্দেশনা মানাতে উপজেলা প্রশাসন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালালেও তা মানছে না কেউ। আগের মতই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে সবাই। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। সূত্র জানায়, গত ১৩ জানুয়ারী থেকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে ১১ দফা স্বাস্থ্যবিধি জারি করে সরকার। এজন্য সকলকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণাও চালানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার থেকে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওমিক্রন ঠেকাতে সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করে প্রশাসন। ওইদিন শহরের পাঁচমাথা মোড়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরের ট্রাফিক বক্সের সামনে প্রচারণায় অংশ নেন সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহমুদুল হাসান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার, সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসনাত খান, ট্রাফিক বিভাগের শহর ও যানবাহন পরিদর্শক জ্যোতির্ময় রায়, ট্রাফিক সার্জেন্ট আশরাফ কোরায়শী, স্বেচ্ছাসেবী নওশাদ আনসারী, মো. সুলতান, পাখি আলমগীর,রাসেল, তাবাসসুম আক্তার, বিথী, সোহেল, মোকাররম, আজাদ প্রমুখ।

করোনা প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে চলা প্রচারাভিযানের ওই সময় দেখা যায়, মুখে সকলের মাস্ক। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পরেই লোকজন ফিরে আসে পূর্বের অবস্থায়। তারা করোনা ভাইরাসের মত মহামারীকে পাত্তা না দিয়ে চলাফেরা করছে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেও করোনা ভুলতে বসেছে সৈয়দপুরের জনসাধারণ। গতকাল বৃহস্পতিবার গোটা শহরে দেখা যায় শারীরিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না অধিকাংশ মানুষ। বিশেষ করে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে মাস্ক ছাড়াই বাইরে চলাফেরা করছেন। দেখা যায়, গায়ে গা লাগিয়ে বাজারে যে যার মত কেনাকাটা করছেন বা অহেতুক বাজারে বা সড়কে ঘুরছেন। করোনা সংক্রমণের জন্য বেশী বিপদজনক মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরি করছেন অনেকে। সব মিলিয়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে চলাফেরা করছেন মানুষজন।এদিকে স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা বিক্রেতাদের মাঝে দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধির বালাই। ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে অধিক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখছেন। এদের কারণে রাত পর্যন্ত বাইরে ঘোরাঘুরি সুযোগ নিচ্ছে অসংখ্য মানুষ। চলছে রিক্সাভ্যান ও অটোরিক্সাসহ অন্যান্য যানবাহনে গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠা নামা করছে।

জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি জারি করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে সংক্রমণ প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ আইনে কেউ মাস্ক না পরে বের হলে জেল অথবা জরিমানা বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। আইনের বাইরেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরিধান করতে মানষকে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করছেন। অথচ অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরিধানকে তোয়াক্কা না করে সর্বত্র স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছেন। কেউ সংক্রমণ প্রতিরোধের এই অতি দরকারি সতর্কতা আমলেই নিচ্ছেন না। শহরের মূল সড়ক ও বাজারে দেখা যায়, কেউ কেউ মাস্ক পরলেও অনেকে মুখে মাস্ক নেই। অনেকে কথা বলার সময় মাস্ক খুলে ফেলছেন। বাজারের কয়েকজন দোকানীরা বলেন, আমরা ক্রেতাদের দূরে দাঁড়াতে, মাস্ক পরতে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলি। কিন্তু ক্রেতারা অসন্তোষের ভাব নিয়ে কোন কথাই শুনতে চান না। বাজারে পণ্য কিনতে আসা মনোয়ার নামে এক ক্রেতা জানান, দেশে করোনার ভয়াবহ অবস্থা। এরপরও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। তিনি বাইরে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসনের অভিযান চালানোর তাগিদ দেন। অপরদিকে গ্রামাঞ্চলের হাট বাজারে মানুষজন মুখে মাস্ক না লাগাসহ সামাজিক দূরত্ব পর্যন্ত বজায় রাখছে না।

এদিকে দোকান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে লংঘন করতে দেখা যাচ্ছে। কনফেকশনারী দোকানসহ হোটেলগুলেতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ওইসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারিদের মুখে দেখা যায় না কোন মাস্ক। তারা সরকারের স্বাস্থ্যবিধির ধার ধরছেন না। ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন নিজেরাও বিধি মানছেন না, উল্টো অন্যদের অযথা বাইরে বের হওয়ার সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পরার বিষয়ে জানতে চাইলে শহরের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক জানান, বাইরে চলাচলে অবশ্যই মাস্ক পরা এবং সাধ্যমত শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা জরুরী। এর অন্যথা করলে সংক্রমণের বিপদ বাড়বে। তিনি সংক্রমণ রোধে মানুষের অপ্রয়োজনীয় চলাচল, ঘোরাঘুরি বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করেন। মানুষজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন করোনা সংক্রমন রোধে জনগণকে সচেতন করতে আমরা প্রচারাভিযান শুরু করেছি। তারপরেও যদি কেউ আইন না মানে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here