খবর৭১ঃ
শরীর ও মাংসপেশীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রোটিন। মাংসপেশীর পাশাপাশি আমাদের ত্বক, উৎসেচক ও হরমোন তৈরি করতেও সাহায্য করে এই উপাদান। প্রোটিনের অভাবে শরীরের নানান সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে কি না তা কয়েকটি লক্ষণ দেখে বোঝা যায়। সেগুলো হলো-
এডিমা
শরীরের কোনো অংশ ফুলতে শুরু করলে তখন তাকে এডিমা বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইমিউন সিরম অ্যালবুমিনের অভাবে হয়ে থাকে, যা রক্ত বা রক্ত প্লাজমার তরল অংশের উপস্থিত প্রোটিন। প্রোটিনের অভাব পেটের গুহায় তরল পদার্থের সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই লক্ষণ দেখা দিলে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
ফ্যাটি লিভার
প্রোটিনের অভাব দেখা দিলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হয়ে থাকে। অর্থাৎ লিভারের কোষে এ সময় ফ্যাট জমা হয়ে যায়। শরীরে প্রোটিনের অভাবের প্রতি সজাগ দৃষ্টি না-রাখলে ফ্যাটি লিভার রোগের আকার ধারণ করে। এর ফলে লিভার ফুলে যায়, ঘা হয় এমনকি লিভার বিকল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। মোটা অথবা যারা মদ্যপান করে থাকেন, তাদের মধ্যে সাধারণত এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
ত্বক, চুল ও নখ
প্রোটিনের অভাব থাকলে ত্বক, চুল এবং নখেও এর স্পষ্ট ছাপ দেখা যায়। কারণ এই অংশগুলির তৈরিতে প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রোটিনের অভাবে ব্যক্তির ত্বক ফাটতে শুরু করে। ত্বকে দাগ, ছোপ ও লাল চিহ্ন দেখা দেয়। চুল পাতলা হয়ে ঝরতে শুরু করে। নখ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
মাংসপেশীর ক্ষতি
মাংসপেশীর জন্য প্রোটিন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিনের সরবরাহ কমলে শরীর নানান ক্রিয়াকলাপ চালানোর জন্য হাড় থেকে প্রোটিন সংগ্রহ করতে শুরু করে। প্রোটিনের অভাবে আমাদের মাংসপেশীর বড় ক্ষতি হয়। বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
হাড়ের ফ্র্যাক্চার
প্রোটিনের অভাবে শুধুমাত্র যে মাংসপেশীর টিস্যু প্রভাবিত হয় তা নয়, বরং হাড়ের টিস্যুর ওপরও এর প্রভাব পড়ে। প্রোটিনের অভাবে আমাদের হাড় দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করে। তার পর সেটি ভাঙার বা ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
বাচ্চাদের শারীরিক উন্নতি
মাংসেপশী ও হাড়ের জন্যই শুধু নয়, বরং শরীরের বৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত জরুরি। প্রোটিনের অভাবে বাচ্চাদের শারীরিক বিকাশ বাধিত হতে পারে। এর ফলে তারা অপুষ্টির শিকার হতে পারে। এমন অনেক সমীক্ষা প্রকাশ্যে এসেছে, যার মাধ্যমে প্রোটিন ও শারীরিক বৃদ্ধির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয় জানা যায়।
সংক্রমণের ভয়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খারাপ হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসকদের মতে, প্রোটিনের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বয়স্কদের মধ্যে লাগাতার ৯ সপ্তাহ প্রোটিনের অভাব দেখা দিলে রোগপ্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ায় খারাপ প্রভাব পড়ে।
ওজন বৃদ্ধির সমস্যা
ক্ষিদে পাওয়া প্রোটিনের অভাবের অন্যতম লক্ষণ। শরীরে প্রোটিনের জোগান কমলে, তখন বার বার খিদে পায়। শরীর তখন ক্ষিদে বাড়িয়ে প্রোটিন সংগ্রহের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোটিনের স্থানে হাই ক্যালোরি খাবার-দাবারও শরীরের ওজন বৃদ্ধির সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
শরীরের প্রোটিনের অভাব দূর করার জন্য ডিম, দুধ, দই, পনীর, মুরগির মাংস, মুসুর ডাল, ফল, সবজি, ব্রকোলি, বাদাম ও ওটসের মতো খাদ্য উপাদান গ্রহণ করা উচিত। এর ফলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন লাভ করতে পারবে।