শেয়ারবাজারে ৩ লক্ষাধিক বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল

0
311

খবর৭১ঃ নির্ধারিত সময়ে নবায়ন ফি না দেওয়ায় শেয়ারবাজারে গত এক মাসে ৩ লাখ ৪ হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় পুরুষ ১ লাখ ৯৭ হাজার, নারী ৭৬ হাজার এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) প্রায় ৩০ হাজার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। লেট ফি দিয়েও এসব অ্যাকাউন্ট আর চালু করা যাবে না।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয় ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএল (সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেড)। নবায়নের শেষ সময় ছিল ৩০ জুন। তবে ব্রোকারেজ হাউজগুলো জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিষ্ক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধের তালিকা পাঠানো শুরু করে।

আর সর্বশেষ হিসাবে দেশের শেয়ারবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৪১৭টি। সিডিবিএল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারের স্বচ্ছতায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের অমনিবাস অ্যাকাউন্ট (বিশেষ অ্যাকাউন্ট) বন্ধ হয়েছে। এখন বাজারে স্বচ্ছতা আনতে হলে বিও অ্যাকাউন্টে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ বিদ্যমান আইন পরিপালনে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সূত্র জানায়, বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন করতে ৪৫০ টাকা লাগে। এর মধ্যে সিডিবিএল ১০০ টাকা, হিসাব পরিচালনাকারী ব্রোকারেজ হাউজ ১০০ টাকা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) ৫০ টাকা এবং বিএসইসির মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ২০০ টাকা জমা হয়। জানা গেছে, প্রতিবছর ৩০ জুনের মধ্যে এই ফি সিডিবিএলে জমা দিতে হয়।

এ বছর ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সক্রিয়তা বিবেচনা করে বছরের বিভিন্ন সময়ে অ্যাকাউন্ট বাতিল করে। আর নবায়ন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় জুনে বেশির ভাগ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়।

১৫ জুন শেয়ারবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৬৪ হাজার। বর্তমানে তা ২৩ লাখ ৬০ হাজারে নেমে এসেছে। ফলে ৩ লাখ ৪ হাজার বিও বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে ২৩ লাখ ৬০ হাজার অ্যাকাউন্টের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারী ২২ লাখ ৩৭ হাজার, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ১ লাখ ২৩ হাজার এবং বিভিন্ন কোম্পানির ১৪ হাজার ৭২০টি।

তবে সিডিবিএল সূত্র বলছে, ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও অলিখিতভাবে আরও কিছুদিন সময় রয়েছে। কিছু হাউজ এখনো তালিকা পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। ফলে অ্যাকাউন্ট বাতিলের সংখ্যা আরও বাড়বে। গত বছর এ প্রক্রিয়ায় তারা ২ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছিল। তবে যেসব অ্যাকাউন্টে শেয়ার আছে অথবা টাকা জমা আছে, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। এছাড়া বেশকিছু হাউস অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিট বা জামানত জমা দিয়েছে। ওইসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়নি।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যাবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে প্রতিবছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেওয়া হতো।

তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। তবে বছরে বাজেটে ফি ৫০ টাকা কমানো হয়। অন্যদিকে ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল বিএসইসির জারি করা এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে অ্যাকাউন্ট বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছিল।

সিডিবিএলের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে ২৩ লাখ ৬০ বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে ঢাকায় ১৮ লাখ এবং ঢাকার বাইরে ৫ লাখের কিছুটা বেশি। কিন্তু গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ লাখ ১০ হাজার সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। এগুলোয় শেয়ার আছে এবং এগুলো থেকে নিয়মিত লেনদেন হয়।

এছাড়া ১০ লাখ ৪০ অ্যাকাউন্টে কখনো কখনো শেয়ার থাকলেও বর্তমানে শূন্য রয়েছে। ৫ লাখ বিও অ্যাকাউন্টে কখনোই কোনো শেয়ার ছিল না। এসব বিও অ্যাকাউন্ট সাধারণত আইপিওর জন্য ব্যবহার করা হয়। লটারিতে শেয়ার বরাদ্দ পায়নি বলে এসব অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার নেই।

সূত্র জানায়, আগে পুঁজিবাজারে আইপিও আবেদনের জন্য নামে-বেনামে প্রচুর বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হতো। একই ব্যক্তি এক থেকে দেড়শ বিও অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন। আর এসব বিওতে শুধু আইপিও আবেদন করা হয়।

২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। কিন্তু ২০১০ সাল শেষে তা ৩৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর এই প্রবণতা রোধে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়াও বিও অ্যাকাউন্টে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সার্টিফিকেট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অ্যাকাউন্টের স্বচ্ছতা আনতে গ্রাহক পরিচিতি (কেওয়াইসি) ফরম পূরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু বাজার সংশ্লিষ্টদের চাপে শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here