মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংকট বিরাজ করছে। করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে মাত্র ৪ জন জনবল দিয়ে চলছে করোনা ইউনিটের চিকিৎসা। ইউনিটে নেই অতি জরুরী উচ্চ চাপের অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্র হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা। ফলে সংকটাপন্ন শ্বাসকষ্টের করোনা রোগীসহ অন্যান্যরা কাংখিত চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানা যায়, হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট চালু থাকলেও করোনা ইউনিটে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সুবিধা যুক্ত করা হয়নি। প্রতি দিনই করোনার প্রকোপ বাড়লেও ওই যন্ত্র স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি এখনো। ফলে করোনা রোগীসহ অন্য রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্লান্ট কোন কাজে আসছে না। এই সুবিধার অভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন করোনা রোগীর স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে গত বছর করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৫ শয্যার করোনা ইউনিট প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে যুক্ত করা হয় সেন্টাল অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধা। অথচ উর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণকালে করোনা ইউনিটে বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যন্ত্র না থাকায় করোনা চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকলেও সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। এমন সব রোগীদের চিকিৎসা নিতে ৪০ কিলোমিটার দূরে রংপুর কোভিড-১৯ হাসপাতালমুখী হতে হচ্ছে। এতে রোগীর স্বজনরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সূত্র মতে, কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে হাসপাতালে করোনা উপসর্গ ও মৌসুমী ফ্লু রোগীর আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন আউটডোর, ইনডোর ও ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে হাজারের মত রোগী সেবা নিতে ভীড় করছেন। এর মধ্যে ১ জন মেডিকেল অফিসার ও ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা উপসর্গ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমানে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সৈয়দপুরে করোনা শনাক্ত রোগী বাড়লেও অধিকাংশ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা ইউনিটে এখনও রোগী ভর্তির চাপ নেই। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক না থাকায় রোগী ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে। আর করোনা উপসর্গের রোগীদের রেপিড এন্টিজেন পরীক্ষাসহ অন্যান্য ল্যাব পরীক্ষায় মাত্র ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকায় ফলাফল পেতে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে হাসপাতালে।
সূত্র জানায়, হাসপাতালের রোগীর তুলনায় সব পর্যায়ে জনবল সংকট বিরাজ করছে। ৩০ জন ডাক্তারের জায়গায় কাজ করছেন মাত্র ২৪ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে ৮ জন রয়েছেন সংযুক্তি চিকিৎসক। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বিঘ্নিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবায় ৯০ জন নার্সের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৬০ নার্স। এছাড়াও সংকট রয়েছে অন্যান্য পদের কর্মী। এর মধ্যে করোনা ইউনিট আলাদা করায় জনবল সংকট আরও প্রকট হয়েছে। জানতে চাইলে, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.মো. ওমেদুল হাসান সরকার জনবল ও হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংকটের মধ্যে হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। করোনা উপসর্গ রোগীদের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এবং বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় কিছু অসুবিধা হচ্ছে। বর্তমান করোনাকালে আমরা (চিকিৎসকরা) চিকিৎসার চেয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা জরুরী করণীয় বলে মনে করছি। এজন্য সবাইকে মাস্ক পরিধান এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এমনটি মেনে চললে মহামারী প্রতিরোধ করা যাবে। চিকিৎসা দিয়ে করোনা নির্মূল করা যাবে না। বর্তমানে করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে চিকিৎসা সেবাই ভেঙ্গে পড়ার আশংকা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।