খবর ৭১: দেশে শিশুশিক্ষার্থীদের মধ্যে দৃষ্টিত্রুটির প্রবণতা অনেকটা বেড়েছে। প্রতি ১০০ জন স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ১৪ জনের দৃষ্টিত্রুটি রয়েছে বলে জানা গেছে। এই শিশুদের দৃষ্টিত্রুটি সমাধানের জন্য চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের কিছু এলাকায় স্কুলের শিশুদের দৃষ্টিত্রুটি পরিস্থিতি’ নামে দেশের চার জেলার বিভিন্ন স্কুলের ৩২ হাজার ৭৪৮টি শিশুর চোখ পরীক্ষা করে একটি গবেষণা চালায় ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল। তাদের গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
জেলা চারটি হলো- ঢাকা, বরিশাল, জামালপুর ও নওগাঁ। গবেষণার তথ্য থেকে জানা গেছে, চার জেলার মধ্যে রাজধানী ঢাকার শিশুদের দৃষ্টিত্রুটির হার ৪০ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ।
ওই গবেষণা প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘দ্য এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব অফথালমোলজি’তে জমা দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
গবেষণা দলের নেতা ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের শিশু চক্ষুরোগ ও স্কুইন্ট (ট্যারা) বিভাগের প্রধান ডা. মো. মোস্তফা হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিত্রুটি শনাক্ত করা ও ত্রুটি সমাধান করাই গবেষণাটির উদ্দেশ্য ছিল।
উন্নত দেশগুলোতে শিশুরা স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরপরই স্কুলগুলোতে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সারা বছরজুড়ে শিশুদের সেরকম কোনো চোখ পরীক্ষা হয় না।
গবেষণা চালাতে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের শিশু চক্ষু চিকিৎসকেরা চার জেলার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের চোখ পরীক্ষা করেন।
গবেষকরা জানান, এ পরীক্ষায় প্রায় ১৪ শতাংশকে শিশুকে চশমা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর এ সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৯ জন। এরমধ্যে ১ হাজার ৬৯৬ জন শিশুকে তাৎক্ষণিক চশমা প্রদান করা হয়। আর বাকি ২ হাজার ৭৩৩ জন শিশুদের চোখে ওষুধ দিয়ে বাড়তি পরীক্ষা করার জন্য ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের স্থানীয় শাখায় পাঠানো হয়।
চিকিৎসক মোস্তফা হোসেন বলেন, শিশুদের দুই ধরণের দৃষ্টিত্রুটি হতে পারে। দূরে বা কাছে দেখার সমস্যা, এ সমস্যা চশমা দিয়ে দূর করা সম্ভব। এছাড়া কিছু শিশুর ‘লেজি আই’ বা দুর্বল চোখ হয়ে থাকে। ফলে ওই সকল শিশুদের কম বয়সে চোখের দৃষ্টি কম হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, শিশুদের ১০ বছর পর্যন্ত দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়। এ অবস্থায় কম বয়সে শিশুদের চোখের চিকিৎসা করলে পরিপূর্ণ দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর শিশুদের চোখের সুরক্ষায় ভিটামিন এ-যুক্ত খাবার নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, টান দীর্ঘসময় স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে শিশুদের চোখে চাপ পড়ে ও মাথাব্যাথা হয়। ফলে শিশুদের দৃষ্টিত্রুটি দেখা দিতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকাতেই শিশুদের মধ্যে দৃষ্টিত্রুটির প্রবণতা বেশি। ঢাকার ১৯টি স্কুলের মোট ৬ হাজার ৪০১ জন শিশু শিক্ষার্থীর চোখ পরীক্ষা করা হয়। যেখানে মোট ২ হাজার ৫৫১ জনকে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা যার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। একইভাবে বরিশালে এ হার ১২ শতাংশ এবং নওগাঁ ও জামালপুরে প্রায় ৫ শতাংশ।
ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের বহির্বিভাগে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের চোখ দেখানোর হার কম। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে বহির্বিভাগে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ২১ হাজার ৮৬১ জন শিশুর চোখ পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায় প্রাপ্তবয়স্কের তুলনায় শিশুর চোখ পরীক্ষা করার হার প্রায় ১৮ শতাংশ। এ হার ২০২০ সালেও মোটামুটি একই রকম ছিল।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জিনগত কারণ ও স্বল্প ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে দেখা গেছে, গ্রামের শিশুদের তুলনায় শহরের শিশুদের চশমা ব্যবহারের হার বেশি। এর পেছনের কারণ কী, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।