দেশ ও দেশের মানুষকে আ‘লীগ এবং বিএনপির হাত থেকে বাঁচাতে হবে: জি এম কাদের

0
669

খবর ৭১: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশ ও দেশের মানুষকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির হাত থেকে বাঁচাতে হবে। ৯১ সালের পর থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। যারা ক্ষমতায় যাচ্ছে তারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দলবাজি ও টেন্ডারবাজী করে আঙ্গুল ফলে কলাগাছ হচ্ছে। দেশের হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা আইনের উর্ধ্বে থেকে দুর্নীতি করে। সরকার দলীয়দের বিরুদ্ধে কোন আইন নেই, আইন শুধু বিরোধীদের জন্য প্রয়োগ হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাত থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা বিএনপির হাতে গেলে শুধু কালেক্টর পরিবর্তন হবে, টাকার অংক বাড়বে কিন্তু জনগনের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দেশের জনগন জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই দলকে সুসংহত করতে হবে।

আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান-এর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে চেয়ারম্যান-এর উপদেষ্টা এবং পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানদের সাথে মতবিনিময় সভায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, নোয়াখালীর বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গেলো রাতেও একজন খুন হয়েছে। প্রায় ৩০জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাদের দল একটাই, নেতাও একজনই। শুধু ভাগাভাগীর কারনেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ। দেশের মানুষ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে রাজনীতি করছে।

এসময় গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোন দলই জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পার্টিকে লাঠিপেটা করেছে আর আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ভেঙে দূর্বল করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। দুর্নীতি, লুটপাট আর বৈষম্য সৃষ্টি করে দেশের সুশাসন ধ্বংস করেছে দুটি দল। তিনি বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু বৈষম্য থেকে মুক্তি পাইনি।

সংসদীয় গণতন্ত্রের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সংবিধানে ৭০ ধারা সংযোজন করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এখন এক ব্যক্তির হাতে নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা এবং নিম্ন আদালত। আর উচ্চ আদালতের নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শতভাগই রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা ব্যতিরেকে রাষ্ট্রপতি কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারছেনা। এক ব্যক্তির হাতে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার কারণে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা স্বৈরতন্ত্র। ৯০ সালের পর থেকে কোন দল একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে তা একদিনের জন্য হলেও নির্বাচনের মাধ্যমে জনগন নির্ধারন করতে পারতেন। অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারে এখন নির্বাচনে ভোট দেয়ার সেই অধিকার হারিয়েছে দেশের মানুষ।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতীয় পার্টি কোন জোটে নেই। নির্বাচনে কিছু আসনে ইলেকশন অ্যারেজমেন্ট হয়েছিলো কিন্তু বেশির ভাগ আসনেই আমাদের প্রার্থীরা লড়াই করেছে। নির্বাচনের পর থেকে আমরা বিরোধী দলের ভূমিকায় আছি। আমরা দেশ ও মানুষের কল্যাণে কথা বলবোই। আমরা আমাদের রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাবো।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এসময় আরো বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন বৈষম্য ছিলোনা, বিচারের নামে প্রহসন ছিলোনা। দেশের ১৬ কোটি মানুষকেই পল্লীবন্ধু নিজের মানুষ মনে করেছেন। জাতীয় পার্টি দেশে আইনের শাসন ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে রাজনীতি করছে।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আদালতের রায়ে বৈধ সরকার হিসেবে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। কিন্তু তিন জোটের রুপরেখা লঙ্ঘন করে তৎকালীন সরকার পল্লীবন্ধুকে গ্রেফতার করেছিলো। নির্বাচনে পল্লীবন্ধুকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলো। তখন জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতা জেলে ছিলো, জাতীয় পার্টির পক্ষে নির্বাচন করার কেউই মাঠে ছিলোনা। কিন্তু দেশের জনগন পল্লীবন্ধুর পক্ষে রাস্তায় নেমে আসেন। জনতার আন্দোলনের মুখে তখনকার সরকার পল্লীবন্ধুকে নির্বাচন করতে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। পল্লীবন্ধু জেলে থেকেই নির্বাচন করে পরপর ২বার ৫টি করে আসনে নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের সুযোগ দিলে ৯১ সালেও জাতীয় পার্টি আবারো সরকার গঠন করতে পারতো।

এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কলুষিত করেছে বর্তমান সরকার। বিএনপি দুর্নীতি ও দুঃশাসনের যে অপরাজনীতি শুরু করেছিলো বর্তমানে আওয়ামী লীগ তা চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। দেশে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, দেশের মানুষ কথা বলতে পারছেনা। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের সংশোধন চাই। তিনি বলেন, দেশের মানষ যেনো কারাগারে, দেশের মানুষ শৃঙ্খল মুক্ত হতে চায়। সরকারী দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও লুটপাটের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। দেশের মানুষ পরিত্রাণ চায়, আমরাই দেশের মানুষকে মুক্তি দেবো। তাই সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

বক্তব্য রাখেনÑ কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, মাননীয় চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, মোঃ জহিরুল আলম রুবেল, মাহজাবিন মোর্শেদ, ডা. কে আর ইসলাম, পনির উদ্দিন আহমেদ এমপি, মোহাম্মদ উল্লাহ, প্রফেসর সবিতা বেগম, নাজনিন সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম মধু, মিসেস সালমা হোসেন, এডভোকেট মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, মৌলভী মোঃ ইলিয়াস, এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, মোঃ আবু সালেক, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শরিফুল ইসলাম চৌধরী, ইয়াহ ইয়া চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here